আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন

 

‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগান ধারণ করে শুরু হলো বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন। দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ৬৭ বছরে পা দেয়া দলটি নেতা নির্বাচন করবে। গঠনতন্ত্র অনুসারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ তিন বছর। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। দুই দফায় এক বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছিলো। দেশের বৃহত্তম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। সৃষ্টিলগ্নে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে যাত্রা শুরু করলেও ১৯৫৫ সালে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতা ধারণ করে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামে পুনর্যাত্রা করে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে দলটি। কালের পরিক্রমায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আওয়ামী লীগ আজ উপমহাদেশ তথা এশিয়ার রাজনীতিতে অন্যতম মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন, ঢাকার কে.এম.দাস লেনের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা প্রগতিশীল একটি অংশ সিদ্ধান্ত নেয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠনের। দলটির প্রথম সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৫ সালে দলকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তুলতে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে রাখা হয়, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় এবং এর রায় মেনে নিতে পাকিস্তানি শাসকচক্রের অসম্মতি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা দলের পদে থাকতে পারবেন না। ফলে বঙ্গবন্ধু দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলে সভাপতি হন এএইচএম কামারুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক হন জিল্লুর রহমান। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্য এবং নৃশসংতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এরপর ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বদলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ৪৪ সদস্যের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৭৮-এর এপ্রিলে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আবদুল মালেক উকিলকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। বঙ্গবন্ধুবিহীন ও চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাহীন আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ ও দলকে আরও শক্তিশালী করতে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে। আওয়ামী লীগ সভাপতি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি নতুন করে পথচলা শুরু করেছিলো। বহু পথ অতিক্রম করে আজ সেই দলটি সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিণত। দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার মিছিলে রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে, মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করেছে, তাতে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে গেছে দলটির শিকড়। নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার দুর্বার হাতছানি আমাদের সামনে। দক্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দলটি সেই প্রত্যাশা পূরণেও অবদান রাখবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি।