শোধন করা বীজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হোক

 

বাংলাদেশের ঊর্বরা মৃত্তিকায় প্রায় তিন শতাধিক জাতের ফসল উত্পাদন হয়ে থাকে। নতুন প্রযুক্তি ও বীজের ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু উত্পাদনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আরো কিছু করণীয় বাকি রয়েছে। কৃষিকার্যের শত্রু হলো প্রায় ১২০০ রকমের রোগ, ১০০০ ধরনের পোকামাকড় এবং কয়েকশত প্রকারের আগাছা। এইসকল শত্রু একত্রে মিলে ফসল উত্পাদনের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ক্ষতি করে থাকে। টাকার হিসেবে এর ক্ষতির পরিমাণ বছরপ্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আবার কমপক্ষে ২০ ভাগ ফসল নষ্ট হয় শুধু বীজবাহিত রোগের কারণে। বীজবাহিত রোগ দমনের প্রধান উপায় হলো বীজ শোধন করা। বীজ শোধন করে চাষাবাদ করলে একদিকে উত্পাদন খরচ ১০-১৫ ভাগ কম হয়, অন্যদিকে ফসলের উত্পাদনও ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি হয়। কৃষিবিজ্ঞানীরা এরূপই মত প্রদান করছেন।

বর্তমান বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ শোধন করা বীজ বপন বাধ্যতামূলক করেছে। শোধন করা ছাড়া কোনো শস্যের বীজই সেসব দেশে বপন করতে দেয়া হয় না। বাংলাদেশের আশপাশের সব দেশ যেমন ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, চীন, ভিয়েতনামে এখন শোধন ছাড়া কোনো বীজ বপন করা নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে এটি এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা যায়নি। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রথম বীজ শোধন প্রক্রিয়া অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কৃষি মন্ত্রণালয়। এই উপমহাদেশে বাংলাদেশই প্রথম বীজ শোধন প্রক্রিয়া গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। ভারত এর দুই বছর পর ২০০৯ সালে বীজ শোধন কার্যক্রম গ্রহণ করে। বাংলাদেশ সবার আগে সিদ্ধান্ত নিলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারেনি। ভারত বাংলাদেশের দুই বছর পর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করেছে শস্য উত্পাদনে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে। ২০১০ সালে বিএডিসি তিনটি বীজ শোধন প্লান্ট স্থাপন করেছিলো। কিন্তু এই কয়েকটি প্লান্ট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ শোধন করতে পারে। বিএডিসি ১৬টি বীজ শোধন যন্ত্র বিদেশ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলো। তার কয়েকটি এখন প্রায় অকেজো হয়ে আছে। বাজেট নেই বলে বিএডিসি নতুন বীজ শোধন কেমিকেল, যন্ত্র ও ছত্রাকনাশক কিনতে পারছে না।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকারের উচিত হবে অধিক পরিমাণে বীজ শোধনের যন্ত্র কেনার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা এবং এইভাবে শোধিত বীজের আওতা বাড়িয়ে তোলা। এক পর্যায়ে শোধন করা বীজ বপনে বাধ্য করতে হবে এবং এর জন্য বিলম্ব করা যাবে না। সরকারি আওতায় এটি পুরোপুরি সম্ভবপর না হলে বেসরকারি খাতকে বীজ শোধনের প্লান্ট স্থাপন করতে উত্সাহিত করা প্রয়োজন এবং উভয় খাত মিলে শতভাগ শোধিত বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খাদ্যচাহিদা বৃদ্ধিই কেবল পাবে, হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি ক্রমাগত এক চ্যালেঞ্জ এই দেশের জন্য। শোধন করা বীজ বাধ্যতামূলক করা হলে একদিকে যেমন উত্পাদন খরচ হ্রাস পাবে, অন্যদিকে ফসলের উত্পাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। তাই এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ কাম্য।