শেখ হাসিনা সভাপতি ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের প্রাচীনতম দল ও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-কে পরিচালনার ভার আবারো বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই দিলেন দলটির কাউন্সিলররা। এনিয়ে টানা অষ্টমবারের মতো সভানেত্রী নির্বাচিত হলেন তিনি। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা এবার নতুন কারো হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও কাউন্সিলে উপস্থিত নবীন-প্রবীণ নেতারা অনঢ় অবস্থান নিয়ে দলের ‘চাবির গোছা’ তার হাতেই রেখে দেন। অন্যদিকে, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রস্তাবেই তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের ২ দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের গতকাল রোববার সমাপনী অধিবেশনে কাউন্সিলরদের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনা সভানেত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় দলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এ সময় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-আইইবি মিলনায়তনে উপস্থিত সাড়ে ৬ সহস্রাধিক কাউন্সিলর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

আবারো সভাপতির দায়িত্ব দেয়ায় কাউন্সিলরসহ দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা যে গুরুদায়িত্ব আমার ওপর পুনরায় অর্পণ করলেন, তা আমি বহন করবো। ৩৫ বছর একটা দলের সভাপতি, তবে একটা সময় আমাকে বিদায় নিতে হবে। আর এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা যেন দেশবাসীর সেবা করতে পারি, সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।

এরপর তিনি দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কাউন্সিলরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর সর্বসম্মতভাবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। সম্মেলনস্থল থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠার সময় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশরাফও এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে তার দোয়া কামনা করেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় আইইবি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। দুপুর একটা পর্যন্ত চলার পর দেড় ঘণ্টার বিরতি দিয়ে ৩টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশ থেকে আগত ৪১ জেলার নেতাদের বক্তব্য শুনেন প্রধানমন্ত্রী। এই দীর্ঘসময় সঞ্চালকের ভূমিকাতেও ছিলেন তিনি। এরপর শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। প্রথমে দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র এবং দলের আয়-ব্যয়ের হিসেব কাউন্সিলে সর্বসম্মতক্রমে পাস হয়। এরপর সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আবারো সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চাইলে পুরো মিলনায়তনের চিত্র পাল্টে যায়। সব কাউন্সিলররা দাঁড়িয়ে ‘নো’ ‘নো’ বলতে থাকেন এবং স্লোগান দিতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত তাদের আবেগঘন দাবির প্রতি সম্মান জানান। বিদায়ী বক্তব্য শেষে বিকেল ৫টা নাগাদ পূর্বের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে মঞ্চ ছেড়ে কাউন্সিলরদের আসনে এসে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও সাবেক সচিব রাশেদুল হাসান মঞ্চে উঠে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন। টানটান উত্তেজনার মাঝে প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রথমে সভাপতি পদে নির্বাচন দেন। সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থনের জন্য কাউন্সিলরদের আহ্বান জানালে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেত্রী ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মঞ্চে উঠে ওই পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার পরপর তিনবার এ পদে আর কোনো প্রস্তাব আছে কি না তা জানতে চান। হাজার হাজার কাউন্সিলর তখন ‘কেউ নেই, কেউ নেই’ বলে সমস্বরে বলতে থাকেন। এ পদে আর কোনো নাম প্রস্তাব না আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। এ সময় তুমুল করতালি আর স্লোগানে পুরো মিলনায়তন ও এর আশপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে।

এরপরই শুরু হয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া। টানটান উত্তেজনার মধ্যেই দলটির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মঞ্চে উঠে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম ঘোষণা করেন। তার এ প্রস্তাব সমর্থন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ পদেও আর কোনো নামের প্রস্তাব না আসায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করলে তুমূল করতালির মাধ্যমে তাকেও অভিনন্দন জানান কাউন্সিলররা। ৬৪ বছর বয়সী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করেন। এরপর বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা জানান নবনির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক।

নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচন কমিশন মঞ্চ ত্যাগ করার পর নতুন সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে ওঠেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ বছরের জন্য কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমণ্ডলীর ১৯টি পদের মধ্যে ১৬টি এবং ৪টি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নাম ঘোষণা করেন।

বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশরাফুলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, ও আমার ছোট ভাইয়ের মতো। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে সে সংগঠন ও দেশকে ভালোবেসেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেছে, এজন্য ধন্যবাদ জানাই। আশা করি সংগঠন আরো শক্তিশালী হবে।’ নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র নেতা থেকে সে এ পর্যন্ত উঠে এসেছে, সে সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় দল আরো শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি।’