আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী করছে?

 

অত্যন্ত বেদনাদায়ক এ দৃশ্য। দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শ শ মুসলিম রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন আর সীমান্তে এসে তারা পুশব্যাকের ফলে আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বদেশে অথবা ভাসছেন সমুদ্রে। বেদনার আরেকটি দিক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে এই নিষ্ঠুরতা। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনে নতুন করে শুরু হয়েছে সামরিক অভিযান। খবর অনুযায়ী এতে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক রোহিঙ্গা আর এই সম্প্রদায়ভুক্তরা প্রাণ বাঁচানোর লক্ষ্যে দলে দলে ছুটছেন বাংলাদেশ অভিমুখে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুশব্যাক করা ছাড়া উপায় কী! ইতোমধ্যেই অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি করেছেন এদেশের জন্য। বর্তমানে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করছি আমরা। এর অতিরিক্ত আমাদের জন্য হবে বোঝার ওপর শাকের আঁটি।

রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধানই কি নেই? দীর্ঘদিন বৈশ্বিক রাডারে ধরা পড়েনি এই সংকট। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন সংকটের গভীরতা উপলব্ধি করতে শিখেছে, তারপরও কেন সংকটের সুরাহা হচ্ছে না? মিয়ানমার সরকার কর্তৃক জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হওয়ার বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো। সাত সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনের কার্যক্রম চলছে যখন, তখনই নতুন করে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা দমন প্রক্রিয়া। কমিশন এখন কী বলে বা করে সেটাই দেখার বিষয়। একটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সম্প্রতি ঘটনায় ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাড়িছাড়া হয়েছে। শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা এবং ১৫ হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া কম কথা নয়। এতেও যদি বিশ্ববিবেকে দংশন না হয়, তাহলে আর কবে হবে? মানবিক বিপর্যয় আর কাকে বলে আমরা জানি না।

নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের ঘটনা এককভাবে শুধু বাংলাদেশের ইস্যু হতে পারে না। বস্তুত এটি সামগ্রিকভাবে মানবজাতির সংকট এবং এই সংকট তৈরি করছে একটি দেশের সামরিক বাহিনী। তাদের অজুহাতেরও অভাব হচ্ছে না- রোহিঙ্গারা জঙ্গি হয়ে উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে, এমন কতো কিছু! অভিযোগ যদি সত্য হয়, সেক্ষেত্রেও কি একটি জাতিগত সম্প্রদায় হিসেবে সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এজন্য দায়ী? আমরা লক্ষ্য করছি সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই বিপন্নবোধ করছে। এমনকি সর্বাধিক উন্নত দেশ আমেরিকায়ও রয়েছে এই সংকট। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সব ধরনের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার একটি সর্বসম্মত ঘোষণাপত্র তৈরি করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।