দেশের জন্য অত্যন্ত ভীতিপ্রদ

 

জীবন রক্ষাকারী ওষুধ যদি মানুষের জীবনকে শঙ্কার মধ্যে ফেলে দেয় অর্থাৎ ওষুধের কারণেই মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়, তবে তার চেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না। ওষুধের এমন অরাজকতা চলছে যে, রোগ নিরাময়ের আশায় কিনে নেয়া ওষুধ যে আদৌ ওষুধ তারও নিশ্চয়তা নেই। এ রকম চিত্র পরিলক্ষিত হলে বাংলাদেশের মতো একটি জনসংখ্যাবহুল দেশের জন্য তা যে অত্যন্ত ভীতিপ্রদ এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় ওষুধের বাজার হলো পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সংলগ্ন মার্কেট। অথচ সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেলো, এই মার্কেটে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক ওষুধ জব্দ করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এমন খবর যখন জানা যাচ্ছে তখন, সারাদেশেও যে ওষুধ নিয়ে এ রকম অরাজকতা চলছে না তার নিশ্চয়তা কি? তথ্যমতে, এই জব্দ করা ওষুধগুলো অনিবন্ধিত, নকল ও ভেজাল। পৃথক চারটি গোডাউন ও একটি বাসা থেকে এসব ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যখন এক যুবককে এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে এবং আরও তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেয়া হয়েছে; তখন তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহপূর্বক উদ্যোগ নিন। যেন এসব কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়। এর চেয়ে বিস্ময়কর ও ভয়ানক আর কিছু হতে পারে না, যখন অসাধুচক্ররা নিজেদের স্বার্থ আদায়ে জন্য মরিয়া হয়ে মানুষের জীবনকে শঙ্কায় ফেলতেও দ্বিধা করছে না তখন এই চক্রগুলো এবং এর মূল হোতাদের চিহ্নিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা চাই যতো দ্রুত সম্ভব এদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

নকল ওষুধসংক্রান্ত নানা অভিযোগ আছে। সম্প্রতি পত্রিকায় এসেছে, জোনাডেক্স ইনজেকশনটি ক্যানসার রোগীদের দেয়া হয়। অথচ ওষুধটি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, আলজেরিয়া এবং ভারত উৎপাদন করে এবং তা বাংলাদেশে অনুমোদিত নয়। কিন্তু তারপরও একটি অসাধুচক্রের সহায়তায় চলছে এ ওষুধ। এমনকি ইনজেকশনটি অহরহ নকল হচ্ছে বাংলাদেশে। এছাড়া নকল ওষুধের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন ও মলমজাতীয় ওষুধ। ফলে এসব ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন রোধ করা অপরিহার্য।

সম্প্রতি সরকার ১১টি ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করেছে। আরও ২৩টি কোম্পানির এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে বেশকিছু কোম্পানি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মানহীন ওষুধ উৎপাদন-বিপণন অব্যাহত রেখেছে বলেই জানা যায়। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, এই বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উৎপাদন-বিপণন অব্যাহত রাখবে আর তার ফলে মানুষের জীবন শঙ্কা বৃদ্ধি পাবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যখন এমন বিষয়ও আলোচিত হচ্ছে যে, নকল, ভেজাল ও অননুমোদিত ওষুধ বিক্রির একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থানে। তখন নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সময়েই নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সরকার এসব ওষুধ রোধে নানা রকম পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে, কোম্পানি সিলগালাও করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো নকল বা ভেজাল ওষুধ রোধ হয়নি। মানহীন ওষুধের মরণছোবল থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে কোনো প্রকার অনুকম্পা নয়, বরং দোষীদের এমন শাস্তি নিশ্চিত করুন যেন এ রকম দুঃসাহস তারা আর না দেখাতে পারে। মনে রাখতে হবে এসব সিন্ডিকেটদের কর্মকাণ্ড মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শামিল। এদের ঘৃণ্য মানসিকতা শিকার হয়ে মানুষ আরও অসুস্থ হতে থাকবে, মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়বে এ পরিস্থিতি কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। ওষুধ খাতের নৈরাজ্য সমূলে উৎপাটনে সরকার দ্রুত আরও কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।