পাঁচ দফা না মানলে ১ জানুয়ারি থেকে কঠোর আন্দোলন

শহীদ মিনারে টিভি শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমাবেশে ঘোষণা

 

দেশীয় টিভিতে ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচার এবং বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পূরণের আল্টিমেটাম দিয়েছেন টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দুর্বার আন্দোলন কর্মসূচি পালনের হুমকি দিয়েছেন তারা। বুধবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফেডারেশন অব টেলিভিশনস প্রফেশলানস অর্গানাইজেশনসের (এফটিপিও) ব্যানারে দিনব্যাপী ‘টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলী সমাবেশ’ শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

এফটিপিওর আহ্বায়ক অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদ সমাপনী বক্তব্যে বলেন, সরকারকে আমাদের পাঁচ দফা দাবি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মানতে হবে। দাবি মানা না হলে ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশর সব টিভি শিল্পী ও কলাকুশলীরা দুর্বার আন্দোলন শুরু করবে। এ সময় তিনি আগামী ১৬ ডিসেম্বরকে ‘বিদেশি সিরিয়ালমুক্ত টিভি মিডিয়া’ দিনের ঘোষণা করেন। এজন্য ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সব টিভি চ্যানেলকে ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধের আল্টিমেটাম দেন তিনি। এরপরও কোনো চ্যানেল বিদেশি ডাবিং করা সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার করলে ওই চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন মামুনুর রশীদ। এর আগে ‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ স্লোগানে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু হয়। দিনব্যাপী এই সমাবেশের শুরুতেই মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এফটিপিও’র অন্তর্ভূক্ত ১৩টি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর প্রয়াত শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম ঘোষণা করার পাশাপাশি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করে সংগঠনটি। সমাবেশে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হলো- ১. দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করা। ২. টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতিত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা। ৩. টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির নূন্যতম ও যৌক্তিক হার পুনঃনির্ধারণ করা। ৪. দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করা এবং ৫. ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা।

 

এফটিপিওর সদস্য সচিব নির্মাতা গাজী রাকায়েত এফটিপিওর ধারণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের একতার শক্তিটি আমরা দেশবাসীকে দেখাতে চাই।  সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘অনেক ক্লায়েন্ট ও এজেন্সি শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দেশক ও প্রযোজকদের উপর তাদের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছে।  এটা খুব অমানবিক।’ এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘কোনো একটি শক্তি আমাদের ইচ্ছামতো চালাতে চাইছে, দমন করতে চাইছে আমাদের। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমস্যার সমাধান করতেই হবে।’ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে কর্তৃপক্ষের তুমুল নিন্দা করেন অভিনেতা আবুল হায়াত। বিদেশি শিল্পীরা এ দেশে কাজের ক্ষেত্রে কতটা নীতিমালা মানছে, তাদের কাছ থেকে আদৌ কোনো লভ্যাংশ আসছে কি না তা পর্যবেক্ষণের অনুরোধও করেন সরকারের প্রতি। অভিনেত্রী ডলি জহুর বললেন, ‘এই আন্দোলনের সঙ্গে দর্শকদের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।’ অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা টিভি বাক্সে বন্দী ছিলাম। এখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। আমাদেরকে রাস্তায় থাকতে বাধ্য করবেন না। জাহিদ হাসানের বক্তব্যের সময় মঞ্চে ছিলেন আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, রোজী সিদ্দিকী, শহিদুজ্জামান সেলিম, বিপাশা হায়াত। নির্মাতা বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘আজকের এই সংকট আমাদের পেশার, সংস্কৃতিরও।  আমাদের পরিচয়হীন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।  সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের আজকের এই আন্দোলন।’ আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছিলেন রোকেয়া প্রাচী, অরুণা বিশ্বাস, চঞ্চল চৌধুরী, আনজাম মাসুদ, সাজু খাদেম, জাকিয়া বারী মম, শিহাব শাহীন, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, ফারহানা মিলি, আজমেরি হক বাঁধন, মৌসুমী হামিদ, রুনা খান, তানজিকা আমিন, কল্যাণ কোরাইয়া, দোলন দে,  ফারজানা চুমকি, শামীমা তুষ্টি, রওনক হাসানসহ একাল-সেকালের অভিনেতা, নির্মাতা ও কলাকুলশীরা। বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীত পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তিতে আয়োজনকে মনোমুগ্ধকর করে রাখেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা।