পিতাকে পিটিয়ে অপহরণ : মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করে পাগল বানানোর পাঁয়তারা : কুলাঙ্গারকে খুঁজছে পুলিশ

 

চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের সেই আব্দুল আলিম এক সহযোগীসহ গ্রেফতার :

গিয়াস উদ্দীন সেতু: উদ্দেশ্য যখন নির্যাতন করে অর্থ আদায় তখন নাম বদলে কি অপরাধ আড়াল করা যায়? পূর্বের সেই প্রত্যাশা মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম বদলে প্রত্যয় করা হলেও পুলিশ চিনতে ভুল করেনি। ছেলের প্ররোচনায় মাদকাসক্তের চিকিৎসার নামে বন্দি করে নির্যাতনের অভিযোগে গতকাল এ কেন্দ্রের পরিচালক আব্দুল আলিম ও তার সহযোগী রুবলেকে পুলিশ গ্রেফতার করলে স্থানীয়রা নিরাময় কেন্দ্রটি নিয়ে এরকমই মন্তব্য করতে থাকেন।

জানা গেছে, প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এবার ঝিনাইদহের ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে তার ছেলের প্ররোচনায় মাদকাসক্ত হিসেবে চিকিৎসার নামে মানসিক নির্যাতনসহ অপচিকিৎসায় মস্তিস্ক বিগড়ে দেয়ার পাঁয়তারার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় কেন্দ্রের পরিচালক আব্দুল আলিম ও তার সহযোগী রুবেলকে গ্রেফতার করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ শুরু করেছে জিজ্ঞাসাবাদ। বন্দি বৃদ্ধ আমিরুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ঝিনাইদহের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনিই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে জাহিদুল ইসলাম। গত ১৮ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজার থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরস্থ বিজিবি সদর দফতরের ১ নং গেটের বিপরীতে অবস্থিত প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আটকে নির্যাতন শুরু হয়। মানসিক নির্যাতনসহ ওষুধ প্রয়োগে পাগল করে দিয়ে জমি হাতিয়ে নেয়ার জন্যই ছেলে তার সহযোগীদের নিয়ে পিতাকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করে। এ অভিযোগ পেয়ে পুলিশের চোখ কপালে ওঠে। গ্রেফাতরকৃত আব্দুল আলিম জাফরপুরের ইছাহক কাজির ছেলে। রুবেল বদরগঞ্জ দশমীর রফিকুল ইসলামের ছেলে। আব্দুল আলিমের গড়ে তোলা নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে চরম নির্যাতন করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নির্যাতনে চুয়াডাঙ্গা শেখপাড়ার হেলাল নামক একজনের মৃত্যু হয়। সে সময় ওই নিরাময় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হলেও পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গার এক জনপ্রতিনিধি অন্য নামে নিরাময় কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। ফের শুরু হয় নেশাখোরদের চিকিৎসার নামে নির্যাতন। এক জনপ্রতিনিধির উদ্বোধন করার কারণে পুলিশ মূলত সেদিকে নজরই দিতো না। এবার এক বৃদ্ধকে বন্দি করে নির্যাতন করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আবারও থলের বিড়াল বের করে আনলো? আলিম অবারও কি বের হয়ে ফিরবে নির্যাতন করে অর্থ আদায়ের ডেরায়? স্থানীয়রা এরকমই মন্তব্য করে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এদিকে বৃদ্ধ আটকে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই বলেছেন, ঝিনাইদহ জেলা সদরের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামে আমিরুল ইসলাম (৬৫)। ১৮ নভেম্বর সরোজগঞ্জ বাজারের রাশিদুল ইসলামের জুতোর দোকানে বসে থাকা অবস্থায় ৭-৮ জন যুবক আমিরুল ইসলাম ওরফে ইসলাম উদ্দীনকে বেধড়ক পিটিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চুয়াডাঙ্গা শহরের দিকে নেয়। বাড়ি ফিরে জাহিদুল ইসলাম প্রচার করে তার বাবাকে কে বা করা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। গ্রামবাসীর চাপে ৪-৫ দিন পর ছেলে জাহিদুল জানায় তার বাবা মাদকাসক্ত। তাই চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের প্রত্যয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, টাকার বিনিময়ে চুয়াডাঙ্গার প্রত্যয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন ভালো মানুষকেও সন্ত্রাসী কায়দায় তুলে নিয়ে সেখানে আটকে রাখে। বয়োবৃদ্ধ আমিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানাজানি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার বৃদ্ধকে উদ্ধার করার পাশাপাশি দুজনকে অটক করে। পরে বৃদ্ধ নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ওই দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বিশ্বাস জানান, আমরা আমিরুল ইসলামকে চিনি। তিনি কখনোই মাদকসেবী ছিলেন না। পারিবারিক বিরোধের কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাকে মাদকাসক্ত সাজানো হয়েছে। সাধুহাটি ইউনিয়নের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, ইসলাম উদ্দীন ষড়যন্ত্রের শিকার। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী নাজীর উদ্দীন বলেন, যে ছেলে তার পিতাকে নির্যাতকদের হাতে তুলে দেয়, তার ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।