পিতাকে বন্দি করা কুলাঙ্গার এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র

 

জগতে বাবা-মার ওপর আর কে আছে? যদিও স্নেহ-ভালোবাসা আদর-আল্লাদের পরও নানা করণে কোনো কোনো সন্তান যে কুলাঙ্গার হয় না তা নয়। পক্ষান্তরে কোনো কোনো পিতা বা মায়ের খাজলত অনেক সময় সন্তানের কাছে অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও কি সুধরানোর পথ এড়িয়ে, ঐশ্বরিক বন্ধন অস্বীকার করে উগ্র হওয়া উচিত? পরস্পরকে না বুঝে হিংস্র হয়ে উঠলে তাকে আর যাই হোক মানুষ বলা চলে না। (অ) মানুষকে মানুষের কাতারে নিতে হলে দরকার উপযুক্ত শিক্ষা।

কতোটা হিংস্র না হলে নিজের পিতাকে পিটিয়ে অপহরণের পর মদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করতে পারে কোনো সন্তান? ঝিনাইদহ জেলা সদরের রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম নামক কুলাঙ্গার বাড়ি ফিরে বলে, বাবা অপহৃত হয়েছে। কেন? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মুক্তিপণ আদায়সহ জমি-জমা অর্থ হাতানোর চক্রান্ত। চমকে ওঠার মতোই তথ্য। ভাগ্যিস তার আগেই পরিবারের অন্য সদস্যসহ পাড়া প্রতিবেশীদের কয়েকজনের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছিলো। তা না হলে বন্দি বৃদ্ধ পিতার ভবিষ্যত কতোটা নির্মম হতো তা কে জানে? পরিবরের অন্যদেরসহ পাড়া প্রতিবেশীদের চাপের মুখে কুলাঙ্গার জাহিদুল তার পিতাকে অপহরণ ও বন্দির নাটক থেকে সরে বলতে শুরু করে-পিতা নেশাখোর। তাই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে। ওখানে বন্দি করতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। অবাক হলেও সত্য, যে নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করা হয়েছে সেই নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে পূর্বেও নির্যাতন করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। একজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তখনকার প্রত্যাশা মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিছুদিনের মাথায় সেই একই স্থানে একই স্থাপনায় নাম বদলে প্রত্যয় মাদকাসক্ত নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নামে নতুন করে অর্থবাণিজ্য শুরু করে। বন্ধের পর কেন্দ্রটি নাম বদলে পুন চালুর সময় চুয়াডাঙ্গার একজন জনপ্রতিনিধি উদ্বোধন করেন। পুলিশ বা স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কেউই ওই কেন্দ্রের দিকে নজর দেননি। চালানো হয়েছে খেয়াল-খুশি মতোই। মাদকাসক্তকে সুস্থ করার নামে নির্যাতনের কারণে একজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি শিথিল দৃষ্টিতে দেখার কারণেই যে একজন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধকে তার ছেলের প্ররোচনায় বন্দি করে নির্যাতন করার সাহস পেয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কেননা অপরাধী একবার অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে ওই অপরাধীই শুধু বেপরোয়া হয়ে ওঠে না, সমাজে অপরাধ প্রবণতা পেয়ে বসে।

পিতাকে মেরে ধরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে বন্দি করা কুলাঙ্গারের মুখোশ যখন খুলেছে তখন আর কালবিলম্ব নয়। তাকেসহ তার সহযোগীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে সমাজের ঘাড়ে খেসারতের বোঝা বাড়বে। মাদকের অপব্যবহারও শক্ত হাতে রুখতে হবে। তাছাড়া সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে আর কে কে কোথায় মাদকাসক্ত নিরাময়ের নামে অর্থবাণিজ্যের জন্য নির্যাতনের ঘাটি গেড়েছে তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অন্যথায় আরো কলঙ্কিত হবে সমাজ।