দীর্ঘশ্বাস তাড়িয়ে স্বস্তি পেতে জাগতে হবে, জাগাতে হবে

 

অন্যের অসহায়ত্ব মুহূর্তটাকে কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপর নাম যদি বাণিজ্য হয় তাহলে বিবেকটা থাকে কোথায়? চুয়াডাঙ্গাতেই শুধু নয় ঝিনাইদহ-মেহেরপুরসহ দেশের সিংহভাগ জেলা সদরের হাসপাতালগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা রোগী সওয়ারের যন্ত্রযান তথা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের দিকে তাকালে প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিকতা পায়। প্রতিকার? ওই আশা করাটাও এখন অবাস্তব-অবান্তর। তার ওপর যখন সরকারের পদস্থ কর্তার কুঁড়েমির কারণে বা অর্থ বরাদ্দকর্তার টেবিলের ফাইল র‌্যাডট্যাপ লাল ফিতায় বন্দি থাকার কারণে জ্বালানির দোকানে বকেয়ার পরিমাণ বিয়াল্লিশ লাখে গিয়ে ঠেকে তখন অসহায়ত্বটা কোন একক ব্যক্তির ওপর আর থাকে না। অসহায়ত্বটা রং বদলে গোটা সমাজের দীর্ঘশ্বাস হয়ে দাঁড়ায়। বকেয়ার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর ফুয়েল বা জ্বালানি আর ফিলিং স্টেশন দিচ্ছে না মর্মে খবরটি নিশ্চয় বিবেকবানদের বিবেক দংশিত হয়েছে। নুইয়েছে মাথা। আর যারা বিবেকহীন বাণিজ্যের ফাঁদ পেতেছে? তাদের তো পোয়া বারো।

অবশ্যই দেশের প্রত্যেক নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা তথা সুচিকিৎসা পাওয়ার অধিকারী। এ অধিকার যখন সাংবিধানিক তখন দায় এড়ানোর সুযোগ থাকার কথা নয়। তারপরও অজুহাত খাড়া করে কর্তাদের পার পাওয়া আর তা মেনে নেয়ার দীর্ঘদিনের প্রচলিত রেওয়াজ শুধু সুচিকিৎসার নিশ্চয়তাই ধলুণ্ঠিত করে না, কর্তব্যপরায়ণতা উবে গিয়ে মানবিকতা ঠেকে তলানিতে। তা না হলে ব্যক্তি মালিকনার অ্যাম্বুলেন্স চলে কীভাবে? কেনই বা সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি না দেয়ার মতো অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় দোকানি তথা ফিলিং স্টেশনকে? জ্বালানির দোকানে বিয়াল্লিশ লাখ টাকা বাকি এমনিতে হয়নি। ওই তেল নেয়া হয়েছে, তেল পুড়িয়ে রোগী বহন করা হয়েছে। রোগী বা রোগীর লোকজনের নিকট থেকে জ্বালানির খরচসহ আনুসাঙ্গিক খরচাও নেয়া হয়েছে। তাহলে যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তার টেবিল থেকে বরাদ্দপত্র জেলায় পৌঁছায় না কেন? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন কোনো কোনো দায়িত্বশীলকে যে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় না তা নয়। কেননা, স্বাস্থ্য বিভাগের সকলেই তো আর কুঁড়ে বা লালফিতায় ফাইল বন্দি করে উপরি পাওয়ার প্রহর গোনেন না? যাদের কারণে বিড়ম্বনা, যাদের কারণে অসহায়ত্বের সুযোগে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতে কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হয় তাদেরই উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া দরকার।

নিয়ম থাকলেই হয় না, নিয়মের চর্চা থাকতে হয়। সেটা নিশ্চিত করতে হলে দরকার জবাবদিহিতা। অবাক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের প্রতিটি বিভাগীয় দফতর পরিচালনারই নিয়ম আছে, আছে পদ্ধতি। তারপরও সরকারি কোনো দফতর বা দফতরের কোনো কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে মূলত: নিয়ম চর্চার অভাবে। স্বাস্থ্য বিভাগে এই চর্চা নিশ্চিত করতে পারলে অবশ্যই জাতি দীর্ঘশ্বাসমুক্ত হয়ে ফুরফুরে মেজাজে স্বস্তির শিষ বাজাবে। এ আশা করা এখন অবান্তর বলে মনে হলেও অবশ্যই অসম্ভব নয়। পদস্থ দায়িত্বশীলদের কর্তব্যপরায়ণ করার মতো নেতৃত্ব নিমেষে সচল করতে পারে অচল দফতরের কার্যক্রম। বিশ্বের বহু দেশ পেরেছে, আমাদেরও পারতে হবে। পারার জন্য প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে নেতিবাচক মানসিকতা পরিহারের পরিবেশ গড়তে হবে। কর্তাদের কুম্ভঘুম ভাঙাতে নিজেদের জাগতে হবে, নিজে না জাগলে অন্যকে জাগাবে কীভাবে? আগামীকালকে সুন্দর করতে হলে, আগামী দিনটা নিজের এবং অন্যের জন্য ঝলমলে করতে চাইলে এখনই সক্রিয় হওয়ার উপযুক্ত সময়।