ভালো, আরও ভালো হওয়ার আলো দরকার

 

হিংসা। যার আড়ালে সুপ্তভাবে লুকিয়ে থাকে না পারার কষ্ট। অর্থাৎ ব্যর্থতা। তা না হলে পাশের বাড়ির কর্তার মোটা মাছ হাতে নিয়ে ফিরতে দেখে অন্যের চোখ টাটাবে কেন? নিজে পারার চেষ্টা না করে অন্যের সাফল্যের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাটা শুধু হিংসা নয়, চরম হীনমানসিকতারই প্রকাশ। দিন দিন এই হীনমানসিকতার নগ্ন প্রকাশ প্রত্যন্ত পল্লিতে প্রকটরূপ নিয়েছে। প্রতিকার? নীতি-নৈতিকতা আদর্শ উবে যাওয়া সমাজে হিংসা নামক আগুনের ফুলকি নেভাতে দরকার দূরদর্শী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। যার অভাব রয়েছে বলেই অন্যের আবাদে হিংসার আগুন, কলাবাগানে হেঁসোর কোপ। এসব কি কোনো সভ্য সমাজের চিত্র?

গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গার পৃথক দুটি পাতায় প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদেনে উঠে এসেছে নীতি-নৈতিকতা স্খলনের চিত্র। এর একটি সরোজগঞ্জ এলাকার মাঠের কলাবাগান তছরূপ অপরটি কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত মাঠে আখক্ষেতে হিংসার আগুন। এছাড়াও প্রথম পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধী এক চাটাই ব্যবসায়ীর চাটাইয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার স্পর্শকাতর ঘটনা। অস্বীকার করা যায় না, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের ঘরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে না। সেটাও তো হিংসা! এই হিংসা থেকে মুক্ত হতে না পারলে সমাজের কেউ-ই যে রক্ষা পাবেন না তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। তাহলে সমাজ কেন ঘুরে দাঁড়ায় না? হিংসার বিষদাঁত বসানোর বদলে নিজ ক্ষেত্রে নিজেকে চিনে নিজের সামর্থ অনুপাতে সফল-স্বার্থক করার প্রতিযোগিতায় কেন শামিল করি না? অবশ্যই বোঝাবুঝিতে ঘাটতি আছে। বুঝবান সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে ছোটে, আর অবুঝবান? অলসতায় আচ্ছন্ন হয়ে অপচয় করে সময়। যথাসময়ে জাগাতে না পারার কারণে ব্যর্থতার কষ্টে আষ্টে পিষ্টে ধরে। তখনই অন্যের উন্নতিতে ঈর্ষা-হিংসা নিজেকে করে তোলে পশুরও অধম। লুকিয়ে চুরিয়ে ওই পশুত্বটারই প্রকাশ ঘটায়। অগ্রগামীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে গিয়ে মূলত নিজেরই ক্ষতি করে বসে। পুলিশ কি পারছে ওই পশুত্বটার শাস্তি নিশ্চিত করে সংক্রমিত ক্ষতি রুখতে? ওখানেও বোঝাবুঝিতে ঘাটতি স্পষ্ট। উপরি আয়ের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সঙ্গত প্রশ্ন- দায় কার? খারাপ নয়, সকলে সকলের সাথে যদি ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতে পারি তাহলে কাঙ্ক্ষিত সমাজ পেতে কতোক্ষণ?

না, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের পথে হাঁটা আর নয়। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সমাজকে সুন্দরের পথে নিতে ইতিবাচক মানুষগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামবাংলায় আলোকিত মানুষ গড়ে তোলার নানামুখি পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলার ঐতিহ্য সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন এখন অতীত। সামাজিক সুশিক্ষায় যথেষ্ট ঘাটতি। ফলে নীতি-নৈতিকতা স্খলনের ঝড় উঠেছে। রুখতে হবে। খুঁজতে হবে সময়পযোগী পথ। অন্যথায় অন্যের আবাদ রক্ষার বদলে ধ্বংসের উৎসবে মেতে ওঠা হীনমানসিকতারই হবে জয়-জয়কার। ভালো, আরও ভালো হওয়ার আলো ছড়ানোর জন্য সত্যি একজন নেতা দরকার।