সুন্দর আগামী পেতে প্রয়োজন আজকের মূল্যায়ন

 

‘নতুন’ সব সময়ই আগ্রাসী। অতীতকে গ্রাস করে বর্তমান, বর্তমানকেও হারাতে হয় কালের গহ্বরে। চিরাচরিত চমৎকার এই ধারাবাহিকতাও কেমন যেন অচেনা। পুরোনোকে হারানোতেও মানুষের মনে কষ্ট। কেন? নিশ্চয় মায়া। যদিও মায়ার বাঁধনে বেঁধে রাখা যায় না সময়। সুখের বা দুঃখের স্মৃতিগুলোই তো থেকে যায়। অনেক কিছুই হয়ে যায় ইতিহাস। যেমন দুলদুলের বদলে এখন মোটরবাইক। তেমন দেখা মেলে না ঘোড়ার গাড়ি। চাষের লাঙল কিংবা ধান ভানার ঢেঁকি যেমন বিলুপ্তির পথে, তেমনই যাঁতা-চাকিও চলে গেছে কালের গহ্বরে তথা ইতিহাসের পাতায়।

কালের বিবর্তনে সেদিনের তিন চাকার বাইক বা প্যাডেল চেপে চালানো রিকশার বদলে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক জুড়ে নিয়েছে জায়গা। ওকে মেনে না নিলেও কি তাড়ানো যে যাবে না তা বোদ্ধাদের নতুন করে বোঝাতে হবে না। কেননা, প্রয়োজনের তাগিদেই তো নতুন আসে আগ্রাসী হয়ে। তাকে সর্বগ্রাসী মনে হয় তখনই, যখন নতুনকে বরণের মতো পূর্বপ্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকে। সে দোষ কি নতুনের? নাকি পূর্বের দায়িত্বশীলদের অদূরদর্শিতার? মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। তাহলে পূর্বের দায়িত্বশীলেরা কেন রাস্তাগুলো ভবিষ্যতের চাহিদার মোতাবেক করলেন না? দশাগ্রস্ত সড়ক দেখে বর্তমান যেমন অতীতকে দুষছে, তেমনই  এই বর্তমানকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। তখন প্রজন্ম ক্ষোভের বদলে সন্তোষ প্রকাশ করুক সেটাই কি বর্তমানের কাম্য হওয়া উচিত নয়? যানজট শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে নয়, এক সময়ের প্রত্যন্ত পল্লি কার্পাসডাঙ্গাতেও তার পদধ্বনি। উপজেলা শহরগুলোর কথা না হয় বাদই থাক। যারা রাজধানী ঢাকার দশা দেখে অভ্যস্ত তাদের কাছে কয়েক বছরে জেলা পর্যায়ের যানজটকে হয়তো তেমন গুরুত্ব পাবে না। তবে তা মেনে নিতেও নিশ্চয় চাইবেন না। গড্ডালিকা গা ভাসানোর কোনো কারণ নেই। কেননা, যানজট আর শব্দদূষণ প্রাণিকূলকে বিষিয়ে তুলেছে। ভয়াবহ এ দশা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে বেসরকারি উন্নয়নমূলক একটি সংগঠনের সহযোগী বা ছায়া সংগঠন লোকমোর্চা। অবশ্যই লোকমোর্চা যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপই নিয়েছে। মনে করিয়ে দিয়েছে দায়িত্বশীলকে। পুলিশ প্রশাসন তো দেখছেই।

পৌর নাগরিক সুবিধা, পৌর নাগরিকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির দায়িত্ব পৌর প্রশাসনের। ট্রাফিক আইন প্রয়োগে নিযুক্ত রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। তারপরও জেলা শহরের দশা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া নাগরিকদের যেন এখন আর কিছুই করার থাকছে না। অবশ্যই আইন প্রয়োগে পুলিশকে কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। চুয়াডাঙ্গাকে বাসযোগ্য রাখতে বর্তমানের জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই অন্যদের সাথে নিয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত দিতে হবে। অন্যথায় ইতিহাস ছাড়বে না। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। ফলে সুন্দর আগামী পেতে প্রয়োজন অতীতের দৃষ্টিতে আজকের মূল্যায়ন। দৃষ্টান্ত স্থাপন।

 

পুনশ্চ: পুরোনোকে নতুনের কাতারে সামিল হতে তাকে সময়ের স্রোতে সাতার কেটে টিকতে হয়।