অন্যেরটাও পরোক্ষভাবে নিজের : রুখতে হবে অপচয়

 

জমির মালিক একজন, আবাদ করেন তিনি বা বর্গাচাষি। ফসলও ঘরে তোলেন তারাই। চিরাচরিত এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্যেরও স্বার্থ থাকে। সেই স্বার্থ জাতিগভাবেও ভোগ করে। একইভাবে শিল্পেও। অন্যের সম্পদ সম্পত্তিও পরোক্ষভাবে সমাজের কাজে লাগছে। এটা আমরা ক’জনই আর উপলব্ধি করে তা আগলে রাখি? একইভাবে সরকারি সম্পদ সম্পত্তিও যে সকলের, সেটাও হরহামেশাই ভুলে যাই আমরা। তাহলে কি আমাদের উপলব্ধিবোধ ভোতা? হয়তো হ্যা, হয়তো না। তবে উপলব্ধি বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য যে বলিষ্ঠ দূরদর্শী পথপ্রদর্শক প্রয়োজন তা সভ্য-অসভ্য কালেও কেউ অস্বীকার করতে পারেনি, পারে না। নিজের ও অন্যের সম্পদ রক্ষায় যখন আমরা উদাসীন, তখন সঙ্গত প্রশ্ন- তাহলে কি আমাদের পথপ্রদর্শকের অভাব?

দেশে কোনো আইন নেই? সমাজে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রখার জন্য বিষয়টি যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া, সেহেতু প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন, পরিবর্ধন, পরিবর্তন. পরিমার্জন থাকবেই। রয়েছেও। তারপরও কেন আইনেরই ঘরে পড়ে মূল্যবান মোটরবাইকগুলো ছেড়া কাপড় পচার মতো পড়ে থেকে পচে যেন খসে খসে পড়ছে? অথচ মোটরবাইকগুলো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে দেশে আনা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের রসদ জাগিতেই জোগাতে হয়। পড়শী দেশের সীমান্ত গলিয়ে অবৈধভাবে হলেও মুদ্রা কিন্তু বৈদেশিকই লাগে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে কয়েকশ মোটরসাইকেল পড়ে বিনষ্ট হওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেসব মোটরসাইকেল চুয়াডাঙ্গা সদর থানা, পুলিশ লাইনসহ বিভিন্ন স্থানে আইনের আওতায় বন্দি সেগুলো অবশ্যই কারো না কারো কেনা। সেগুলোও যে পরোক্ষভাবে আমাদের সকলেরই তা উপলব্ধি প্রয়োজন। প্রয়োজনে আইন বাস্তবমুখি তথা সময়পযোগী করে দ্রুত নিলামের ব্যবস্থা করতে পারলে অবশ্যই তা কাজে লাগতো। তা করতে না পারলে ওভাবে মূল্যবান সম্পদ বিনষ্টের ধারাবাহিকতা আমাদের সকলকেই নিজের ও অন্যের সম্পদ অপচয়ের প্রবণতায় প্রলুব্ধ করবে। বিষয়টি কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যায় না। কারণ, আমরা চেটেপুটে খেয়ে বাকিটা অপচয় করে গেলে প্রজন্মের জন্য থাকবে কী? ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় বর্তমান কোনোভাবে কলুষিত হোক তা কাম্য নয়।

শুধু মোটরবাইক নয়, রেলওয়ের সম্পদ সম্পত্তিও যেমন রক্ষার্থে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন তেমনই সকলকেই অন্যের প্রতি দরদী হওয়া দরকার। অনিয়ম রূখতে একে অপরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে অবশ্যই উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন তরান্বিত করে অপচয় হ্রাস নিশ্চিত করতে পালে জাতি হবে সমৃদ্ধ। অপরাধ প্রবণতাও হ্রাস পাবে। যাদের জাতি গুরুদায়িত্ব দিয়েছে তাদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। কেননা, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালো মাইনেই ভালো চেয়ারে বসিয়েছে যে জণগন সেই জণগন সরকারি বেসরকারি কোন সম্পদ সম্পতির অপচয় প্রত্যাশা করে না। অপচয় কখনই কল্যাণ বয়ে আনেনি, আনে না। ফলে কাল বিলম্ব না করে প্রয়োজনীয় পদক্ষে নিতে হবে। দায়িত্বশীলদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্তব্যপরায়নতা কাম্য।