স্বস্তি আর আক্ষেপ নিয়ে মাশরাফিদের শেষ

স্টাফ রিপোর্টার: গত বিপিএলে শেষ ম্যাচটি জিতেছিলো কুমিল্লা। এবারও জিতলো নিজেদের শেষ ম্যাচ। তবে সেটি ছিলো ফাইনাল। এটি প্রাথমিক পর্ব! সেবারের জয়ে ধরা দিয়েছিলো শিরোপা। এবারের জয় বাড়ালো আক্ষেপ। এ জয়ের ধারা যদি শুরু হতো আরেকটু আগে, যদি থাকত অন্তত আরেকটি জয়! টানা চার জয়ের স্বস্তি আর আরেকটু না পারার আক্ষেপ নিয়ে শেষ হলো কুমিল্লার বিপিএল। হেরে শঙ্কায় পড়ে গেল রংপুর রাইডার্স। প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৮ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কুমিল্লার ১৭০ রান তাড়ায় রংপুর তুলতে পারে ১৬২। কুমিল্লার জয়ে প্লে অফ নিশ্চিত হয়ে গেল রাজশাহী কিংসের। চিটাগং ভাইকিংস, খুলনা টাইটানস ও রংপুরের সমান ১২ পয়েন্ট রাজশাহীর। তবে রান রেটে এগিয়ে চিটাগং ও রাজশাহী। রংপুরের চেয়ে রান রেটে পিছিয়ে খুলনা। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে যারা মুখোমুখি হবে ঢাকা ডায়নামাইটসের। রংপুর তাকিয়ে ওই ম্যাচের ফলে। খুলনা জিতলে তারাই খেলবে প্লে অফে, হারলে উঠে যাবে রংপুর। কুমিল্লাকে বড় স্কোরের ভিত্তি গড়ে দেয় ইমরুল কায়েস ও খালিদ লতিফের উদ্বোধনী জুটি। গতবার ফাইনালে দারুণ অর্ধশতক করা ইমরুল এবার প্রথম অর্ধশতক করেছেন শেষ ম্যাচে এসে। পরে কয়েকজনের টুকটাক অবদানে কুমিল্লা স্পর্শ করে ১৭০। রান তাড়ায় রংপুরের শুরুটা ছিলো দারুণ। তবে সেটা কেবলই একজনের সৌজন্যে। মোহাম্মদ শাহজাদের ব্যাটে যখন ঝড়, এক পাশে সৌম্য সরকার তখন স্রেফ দর্শক। তবে নিজের সহজাত প্রবৃত্তিকে দমিয়েও রানে ফেরা হয়নি সৌম্যর। নাবিল সামাদকে ফ্লিক করে উড়িয়ে ফিরলেন ক্যাচ হয়ে। ৩৪ বলে ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটি যখন ভাঙল, সৌম্যর রান ১২ বলে ৫! নাবিল পরে ফেরান লিয়াম ডসনকে। মিঠুনকে থিতু হতে দেননি মাশরাফি। কুমিল্লা অধিনায়ক পরে ইনকাটারে ফেরান শাহজাদকে। আফগান ওপেনার করেছেন ৩১ বলে ৪৫। ৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে রংপুর। স্তিমিত আশা আবার জেগে ওঠে শহিদ আফ্রিদির ব্যাটে। কুমিল্লার বাজে বোলিংয়ে সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানি অলরাউন্ডার করেন ১৯ বলে ৩৮।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আফ্রিদিকে ফেরান রশিদ খান। নিজের আদর্শ ক্রিকেটারকে দারুণ এক গুগলিতে বিভ্রান্ত করেন আফগান লেগ স্পিনার। রশিদ এর আগেই ফিরিয়েছেন রংপুর অধিনায়ক নাঈম ইসলামকে। আফ্রিদির বিদায়ে মনে হচ্ছিলো রংপুরের আশারও সমাপ্তি। জিয়াউর রহমান তবু হাল ছাড়েননি। চেষ্টা করেছেন। তবে পেরে ওঠেননি শেষ পর্যন্ত। ২২ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। কাছে গিয়ে হারায় তবু খুব বড় ক্ষতি হয়নি রান রেটের। রান রেটের সমীকরণ মেলাতেই এ দিন টস জিতে ফিল্ডিং নেয় রংপুর। কিন্তু তাদের বোলারদের দিশাহারা করে ছাড়েন ইমরুল ও লতিফ। ৬২ বলে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুজন।

শুরুটা হয় সোহাগ গাজীকে তুলোধুনো করে। টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রথম ওভারে দারুণ বোলিং করে আসা সোহাগের প্রথম বলেই ছক্কা মারেন ইমরুল, ওভারের শেষ বলে লতিফ। ইনিংসের প্রথম ওভারে আনোয়ার আলী দিয়ছিলেন ৩ রান। সোহাগের করা দ্বিতীয় ওভার থেকে আসে ১৭ রান। এক ওভার পরই আরাফাত সানির এক ওভারে চারটি চার মারেন ইমরুল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কুমিল্লা তোলে ৫৭ রান। কুমিল্লার রানের গতি কমেনি ফিল্ডিং ছড়ানোতেও। লিয়াম ডসনকে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে সীমানার বাইরে ফেলেন ইমরুল, শহিদ আফ্রিদিকে মিড উইকেট নিয়ে ওড়ান লতিফ। ৩০ বলে ইমরুল স্পর্শ করেন অর্ধশতক। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে এসে প্রথম পঞ্চাশ! ইমরুলের ইনিংসটি শেষ হয় আরেকটি ছক্কার চেষ্টায়। সানির বলে সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন ডসন (৩৫ বলে ৫২)। সানির পরের ওভারেই বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে ফেরেন লতিফ (৩৬ বলে ৪৩)। স্যামুয়েলস উইকেট গিয়েই ছক্কা মেরেছিলেন সানিকে। তবে সেই গতিটা ধরে রাখতে পারেননি পরে। রান আউটও হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে (২৪ বলে ৩০)। চারে নেমে মাশরাফিও পারেননি ঝড় তুলতে। শেষ দিকে আসহার জাইদির ১১ বলে ১৭, প্রথম বলেই লিটন দাসের ছক্কা আর শেষ ওভারে রশিদ খানের দু চারে কুমিল্লা তোলে ১৭০। বোলাররা সেটিকে প্রমাণ করেছেন যথেষ্ট। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা রশিদ খান। ছোট রান আপে আবারও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন চোটাক্রান্ত মাশরাফি। ১৩ উইকেট নিয়ে কাটালেন নিজের সেরা বিপিএল। দল জিতলো টানা চার ম্যাচ। এই স্বস্তির পরও হয়ত শেষ বেলায় আক্ষেপটাই বেশি ছুঁয়ে যাবে কুমিল্লা অধিনায়ককে!