খালেদা জিয়ার মামলার শুনানিতে হট্টগোল

 

স্টাফ রিপোর্টার: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য ১২ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। গতকাল পুরান ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৩-এর অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার বিচার চলাকালে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ আদেশ দেন। মামলার শুনানি চলাকালে আদালতে ব্যাপক হট্টগোল হয়। এজন্য এক আইনজীবী আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা মামলার সাক্ষী দুদকের সাবেক পরিচালক ও এ ঘটনার অনুসন্ধান কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট নিতায় রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। এ সময় আদালতে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া আসার আগেই আদালতের বাইরে বিভিন্ন রাস্তায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর সরব উপস্থিতি ছিলো। কঠোর অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। বিকাল ৩টার দিকে আদালত থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন বিএনপি-প্রধান। গতকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়ার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপনের তারিখ ধার্য ছিল। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ও আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিলো। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় নতুন করে একজনের সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন জানালে আদালত তা মঞ্জুর করে। ফলে এ মামলায় গতকাল আত্মপক্ষ সমর্থন কার্যক্রম আর সম্ভব হয়নি। সকালে শুনানি হওয়ার পর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে আদালত বিরতিতে যায়। আড়াইটার দিকে বিচারক এজলাসে আসার পর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন। তারা খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি দুপুরের খাবার খেতে পারেননি, নামাজ পড়তে পারেননি, ওষুধ খেতে পারেননি বলে বলতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের সমর্থক আইনজীবী হোসেন আলী খান হাসান টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর হলে ওই আইনজীবীকে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে আদালত। পরে সেখানে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর ওই আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে রওনা দিয়ে সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে তার অসমাপ্ত বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়। এ সময় তার আইনজীবীরা সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত ১২ জানুয়ারি বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এরপর শুরু হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানি। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ঘটনার অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন পরিচালক নূর মোহাম্মদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন জানান। প্রায় ৪ ঘণ্টার বিরতি চলাকালে আদালতকক্ষে খালেদা জিয়াকে চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করেন দলীয় আইনজীবীরা। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ অন্য নেতারাও সিঙ্গাড়া, রুটি-কলা দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন। আড়াইটার দিকে বিচারক এজলাসে এলে হট্টগোলের ঘটনা শেষে ৩টার দিকে আদালত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১২ জানুয়ারি তারিখ ধার্য করে। এরপর বেগম খালেদা জিয়া আদালত ত্যাগ করেন।