যশোরে যুবককে মারপিট : ২ পুলিশ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি

 

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরে থানায় ঝুলিয়ে এক তরুণকে মারপিট করার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে যুবককে ঘিরে এতো সব, সেই যুবক বলছেন- তাকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও নির্যাতন করা হয়নি। পুলিশ এমনিতেই তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, এমনিতেই ছেড়ে দিয়েছে! আর পুলিশ বলছে, থানায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে ঘটনা পুলিশ অস্বীকার করলেও তদন্ত কমিটি গঠন এবং সংশ্লিষ্ট দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মো. আবু সরোয়ার  শুক্রবার বিকেলে বলেন, ‘সবে তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবককে যশোর কোতোয়ালি থানার মধ্যে দুটি টেবিলের মাঝখানে মোটা একটি লাঠির মাধ্যমে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ওই যুবকের নাম আবু সাঈদ (৩২)। বাড়ি যশোর সদরের তালবাড়িয়া কলেজপাড়ায়। দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের জন্য তাকে এভাবে নির্যাতন করা হয় বলে গুঞ্জন ওঠে। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে একদিন পরেই ওই যুবককে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফেসবুক ও গণমাধ্যমে এ নিয়ে তোলপাড় হলে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ওই যুবক প্রেসক্লাব যশোরে এসে বলেন, ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি শারীরিকভাবে আমার চেয়ে মোটা। আর সেদিন রাতে পুলিশ আমাকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় আটক করে। যে পোশাক দেখা যাচ্ছে, ওই ধরনের জিন্স বা টি-শার্ট আমার নেই।

আবু সাঈদ বলেন, বুধবার রাতে এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে আমি দুই নম্বরি ব্যবসা করি কি-না জানতে চায়। আমি ওইসব দুই নম্বরি ব্যবসার সাথে জড়িত নই। সে কারণে পরদিন রাত ৮টার দিকে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়। আমাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এরপরই দুপুর দেড়টার দিকে প্রেসক্লাবে আসেন কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তালবাড়িয়ার আবু সাঈদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি এই ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মো. আবু সরোয়ার এবং এএসপি ক সার্কেল নাইমুর রহমান। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ছবিটি বেশ কিছুদিন আগে তোলা। আর এসআই নাজমুল একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে সিসি নিয়ে ঢাকায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।

স্থানীয়রা জানান, ৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে তালবাড়িয়া কলেজপাড়া থেকে সাঈদকে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ। কোতোয়ালি থানার কথিত সিভিল টিমের সদস্য এসআই নাজমুল ও এএসআই হাদিকুর রহমান তাকে ধরে নিয়ে যান।  তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আবু সাঈদ পরিবারের সদস্যরা ভয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে না। সাঈদ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাই পরিবারের লোকজন ঝামেলায় জড়াতে চায় না। নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আসমত আলী চাকলাদার বলেন, বুধবার রাতে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো বলে তিনি শুনেছেন। ৪৯ অথবা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাঈদ ছাড়া পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাঈদের বিরুদ্ধে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত এসআই নাজমুল হোসেন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, তিনি দু দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। সাঈদ নামে কাউকে আটক বা চাঁদা আদায়ের সাথে তিনি জড়িত নন। এএসআই হাদিকুর রহমান জানান, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।