ফসল বিনষ্ট রুখতে নানামুখি উদ্যোগ জরুরি

নিজের ক্ষেত নিজে কেটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা? নাকি সত্যিই প্রতিপক্ষ হিংসাত্মক হয়ে ক্ষেত কেটে উজাড় করেছে? গ্রামবাংলায় দিন দিন যেভাবে ক্ষেত বিনষ্টের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েচ্ছ তাতে এসব প্রশ্ন অসঙ্গত নয়, বরঞ্চ প্রাসঙ্গিক। কেননা, ফসল যারই আবাদ করা হোক না কেন, পরক্ষভাবে তার সুফল ভোগ করে সমাজ। ফলে যার ফসল যেভাবেই বিনষ্ট হোক না কেন তাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যার কারণে ফসল বিনষ্ট তাকে শনাক্ত করতে সচ্ছতার সাথে দক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীকে আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা-শাস্তিÍ নিশ্চিত করতে না পারলে ক্ষতির পরিমাণ যে দিন দিন বৃদ্ধি পাবে তা বলাই বাহুল্য।
নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা সমাজে কারো কথা হুট বিশ্বাস করা কঠিন। যদিও নিজের ক্ষেত নিজে কেটে অন্যের ওপর দোষ দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর মতো (অ) মানুষ সমাজে কম হলেও দাপট বেশি। আর ঈর্ষা, হিংসার আগুনে জ্বলে অন্যের পাকা ধানে মই দেয়ার মতো হীনমানসিকতার (অ) মানুষের সংখ্যা? ভালো মানুষের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। যদিও ওদের ছড়ানো বিষবাষ্প গোটা সমাজকেই শ্বাসরুদ্ধ করে তুলছে ক্রমশ। কারণ একজনের সাফল্য দেখে অলসতায় ব্যর্থ হওয়াদের চোখ টাটায়। সেই চোখ টাটানি থেকে হিংসাত্মক হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। ওরা নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর মতো অধ্যবসায়ের পথে না হেঁটে অন্যের উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এদের মুখোশ উন্মোচনে গড়িমসি যেমন সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ, তেমনই অন্যকে ফাঁসানোর জন্য যারা নিজের ক্ষতি করে তাদেরও আইনের আওতায় নিতে না পারার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়। আইনের দৃষ্টিতে শাস্তি-শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি সচেতনতার আলো ছড়িয়ে সকলকে কর্মমুখি করতে পারলে হিংসা আগুন নিভতে বাধ্য।
সমাজের স্বার্থেই আইন প্রণয়ন ও তা প্রয়োগের প্রচলন। আইন অপরাধমূলক কর্মকা- বন্ধ করতে না পারলেও অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়ক। যারা অন্যের সফলতায় হিংসার আগুনে জ্বলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাদের বিবেক কি আইন দিয়ে জাগিয়ে তোলা যায়? সর্বক্ষেত্রে শতভাগ তা না হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অপরাধের মাত্রা ভেদে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে তার ইতিবাচক প্রভাব সমাজকে সামনের দিকে যেতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন তদন্তে অনুমান নির্ভরতা পরিহার করে বুদ্ধি দীপ্ততায় প্রকৃত দোষীকে শনাক্ত করার মতো দক্ষ তদন্তকর্তার কর্তব্যপরায়ণতা। একই সাথে দরকার নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার মতো শিক্ষা।