সহিংস কিশোরদের সুপথে ফেরাতে দরকার আন্তরিকতা

 

সংস্কৃতি মানে কী, আর সেটার চর্চাই বা কীরকম? বর্তমান সময়ে বেড়ে ওঠা একশ্রেণির কিশোরদের কাছে এসব অজানা। এর জন্য তারা যতোটা না দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী তাদের পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পরিস্থিতি। যে সংস্কৃতি সুস্থতার পরিচায়ক নয় তা চর্চা করতে না দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি কেউ। কেউ এসব অনাচার সয়েছে আর কেউ বিষয়টির গুরুত্বই বোঝেনি। পাশ কাটিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। ফলে রাজধানীর উত্তরা এলাকার কিশোরদের একটা অংশ ‘গ্যাং কালচারের’ নামে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের আচরণ রূঢ় এবং সবকিছুতেই সহিংস মনোভাব। অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সম্প্রতি নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে লিপ্ত হতে শুরু করেছে। উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আদনান হত্যাকাণ্ডের আগে এরা একই ধরনের পোশাক পরে ও হকিস্টিক হাতে নিয়ে ফেইসবুকে ছবি পোস্ট করে। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রতিপক্ষ গ্রুপের আরেকজন এই হত্যাকাণ্ডের পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়। আতঙ্কের বিষয় হলো, এরা বয়সে সবাই কিশোর। এসব গ্যাং মূলত পার্টির আয়োজন করে, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে নিজেদের দাপট প্রদর্শন করে। এসব গ্রুপের সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের পরিবারের সন্তান ও স্কুলছাত্র। নিম্ন মধ্যবিত্তের ও লেখাপড়া না করা কিশোর-তরুণও আছে বলে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে। এসব দলের প্রধান যারা তারা মূলত নিজেদের হিরোইজম প্রদর্শনের জন্যই এ ধরনের সংগঠন গড়ে তুলছে এবং অনেক কিশোর বা তরুণ নিজেদের নিরাপদ রাখতে এসব দলে সংযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। দলের প্রধানদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তো নেই-ই বরং নানা অপকাণ্ডের কারণে ইতোমধ্যে অপরাধী হিসেবে তাদের পরিচিতি মিলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। প্রায় দু বছর আগে কিশোরদের এই গ্রুপ ও নানা অপকাণ্ড শুরু হলেও অভিভাবক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি হাতের নাগালে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এসব গ্রুপের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। কিশোরদের এমন মনোভাব তৈরি হওয়ার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব মনোবিদদের। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এসব দলের প্রতি বিশেষ নজর বৃদ্ধি এবং তাদের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সুপথে রাখার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। পরিবার এবং সমাজের দায়িত্বশীলদের অবহেলা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে কিশোরদের মধ্যে অপসংস্কৃতি চর্চার যে ভয়ংকর বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করেছে তা রুখতে হবে।