লুৎফর রহমান সাবু ডাক্তারকে দবালোকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন ॥ চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাঙচুর আগুন

কুষ্টিয়া আমবাড়িয়ার বাড়ি থেকে আলমডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়ে ঈদগামাঠের অদূরে ঘাতকচক্রের কবলে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি/আলমডাঙ্গা ব্যুরো: কুষ্টিয়া মিরপুরের আমবাড়িয়ার লুৎফর রহমান সাবুকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে তিনি আমলার বাড়ি থেকে বের হয়ে আলমডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়ে আমবাড়িয়া ঈদগা ময়দানের অদূরে তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। ঘটনার পর গোটা এলাকায় জ্বলে উঠেছে ক্ষোভের আগুন। জাসদ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মিলনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় জাসদ কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

লুৎফর রহমান সাবু সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদেন। গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন তিনি। দিনে নিজ গ্রাম আমবাড়িয়ায় থাকলেও অধিকাংশ রাতেই তিনি থাকতেন আলমডাঙ্গার বাড়ি। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষকদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সম্প্রতি নানা হুমকি ধামকির মধ্যে পড়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপরও বাঁচতে পারলেন না এলাকার বহুল পরিচিতমুখ গ্রাম্য চিকিৎসক লুৎফর ডাক্তার। স্থানীয়দের একাংশ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, দুখু খুনের বদলা এই খুন। ওই দুখে খুন মামলার আসামি ছিলেন লুৎফর রহমান ডাক্তার।

ঘটনাস্থান থেকে ফিরে আতিক বিশ্বাস জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের মৃত আজিবার হোসেন ে মাল্লার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা লুতফর রহমান সাবু গ্রাম্যচিকিৎসক। সাবু ডাক্তার নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে হালসা বাজারে রোগী দেখে মোটরসাইকেলযোগে তিনি আমবাড়িয়াস্থ বাড়ি ফেরেন। খাওয়া-দাওয়া করে দুপুর দেড়টার পর আলমডাঙ্গা শহরস্থ অপর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।  সাথে ছিলেন দু ব্যক্তি। আমবাড়িয়া ঈদগা ময়দানের নিকট পৌঁছুলে দুর্বৃত্তরা সাবু ডাক্তারকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। হাতে, মাথায় ও মুখে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। লাশের পাশে পড়েছিলো চশমা, মোবাইলফোন সেট, ডাক্তারিব্যাগ, ভাঙা হাতঘড়ি ও একটু দূরে সাবু ডাক্তারের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সাথে থাকা সেই দু ব্যক্তি কে? পুলিশ তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। এদিকে এ নির্মম হত্যাকান্ডের পর বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জাসদ নেতা মশিউর রহমান মিলনের বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ঘরের কয়েকটি রুমের আসবাবপত্র ও তৈজসপত্রসহ মালামাল ভস্মীভূত হয়েছে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। মিরপুর শহরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মিরা এ হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে উপজেলা জাসদের কার্যালয়ে আগুন লাগায়। পরে দমকল বাহিনি গিয়ে আগুন নেভায়।

নিহত সাবু গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ছিলেন এবং তিনি মিরপুর উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রাণ বাঁচাতে বেশ কয়েক মাস পূর্বে তিনি বিএনপি থেকে আওযামী লীগে যোগদান করেন। গত বছর ১৭ অক্টোবর একই গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম দুঃখু নামের এক যুবককে আলমডাঙ্গা উপজেলা সীমান্তে গলার ভেতর লুঙ্গি ছিড়ে ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকা-ের সাথে ডাক্তার সাবু জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়। ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ডাক্তার সাবু। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে এ হত্যাকা-ের কারণ বলতে না পারলেও দুঃখু হত্যার বদলা নিতেই প্রতিপক্ষরা সাবু ডাক্তারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী জালাল বলেন, এ হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা ও হত্যাকাণেডর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত ডা. সাবুর পারিবারিক পরিচয়: আমবাড়িয়ার মৃত শেখ আব্দুল আজিজের ছেলে ডাঃ লূৎফর রহমান সাবু (৫০)  ১ বোন ও ৬ ভায়ের মাঝে সাবু সেজো। সহোদর ভাই খুলনা মেট্রো পুলিশের এসআই সাইফুর রহমান হাকিম। সাবু ডাক্তারের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বড় মেয়ে সাদিয়া শেখ সোনালী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অনার্সের অধ্যায়নরতা। ছেলে সিয়াম আলমডাঙ্গা ব্রাইট মডেল স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোটো মেয়ে সুমনার বয়স মাত্র তিন বছর। সে এখন জানে না, খুনিরা তার কতোটা সর্বনাশ করেছে।