আলমডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদীর পাড় কেটে ভরাট করে ধান চাষ করছে অসাধু চাষি

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নিমতলা গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদীর পাড় কেটে ধানচাষ করছে দুর্বৃত্তরা। আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা গ্রামের সেতুর ওপর দাঁড়ালে নদীটির স্বচ্ছ পানি দেখা যায়। কিন্তু সেতু থেকে ৬০০-৭০০ মিটার দক্ষিণে নদীটি ভরাটের শিকার হয়েছে শীর্ণ হয়ে গেছে। অবিলম্বে এসব দুর্বৃত্তদের হাত থেকে জেলার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গাকে বাঁচাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে এলাকাবাসী।
নতিডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অদূরে নদীর পশ্চিম তীরে গাংনী ইউনিয়নের নিমতলা গ্রাম। সেখানে পাড় কেটে নদী ভরাটের চিত্র দেখা গেছে। ১০০ মিটার চওড়া নদীটি এখানে প্রায় খালে পরিণত হয়েছে। এখানে নদীটির প্রস্থ প্রায় ৪-৫ মিটার হবে। নদীর পূর্বপাড়ে আলমডাঙ্গার বাড়াদী ইউনিয়নের নতিডাঙ্গা ও পশ্চিম পাড়ে গাংনী ইউনিয়নের নিমতলা গ্রাম অবস্থিত। কয়েকজন গ্রামবাসী বলেছে, নিমতলা গ্রামের মোজাম্মেল হক ও মানিক হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক বছরের পর বছর ধরে নদী ভরাট করে ধানচাষ করে আসছেন। তবে বাড়িতে গিয়ে মোজাম্মেল হক ও মানিক  হোসেনকে পাওয়া যায়নি। নদী ভরাটের বিষয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরাও কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
নতিডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. কালু মিয়া বলেন, গ্রাম দুটির (নতিডাঙ্গা ও নিমতলা) বাসিন্দারা তাদের জমি-সংলগ্ন নদীর পাড়কেও নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন। এ কারণে নদীর গতিপথ বন্ধ করে চাষাবাদ করেন। ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেন। এ বছরও অনেকেই ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন নদীতে। আবার অনেকে ধান চাষও শুরু করেছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধি বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাউকে কখনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।
আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মকবুলার রহমান বলেন, একসময় এ নদী প্রচ- খরস্রোতা ছিলো। এর পানি টলমলে স্বচ্ছ। এখন সেই স্রোত আর নেই। তবে পানি দেখলে এখনো চোখ জুড়ায়। আবার খারাপ লাগে যখন দেখি নদীটি ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। এই দিকে কারোরই তেমন খেয়াল নেই। এই নদী রক্ষা না হলে সামনে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজ বলেন, এ কথা ঠিক যে নদীর অংশবিশেষ ভরাট করে ধানচাষ করা হয়। তা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত তিনি কোনো উদ্যোগও নেননি। নদী ভরাট করে স্বাভাবিক গতিপথে বাধা দেয়া যে অপরাধ, তা-ও তিনি জানতেন না।
গাংনী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, সরেজমিনে দেখে প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় কৌশলী (এসডি) আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আগে কেউ আমাকে জানায়নি। পাউবোর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজাদ জাহান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদফতর খুলনা কার্যালয়ের পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞে যারা নেমেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরের একটি প্রতিনিধিদলকে শিগগিরই ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে।