শিক্ষিত তরুণরা বেকার থাকবে কেন?

 

বাংলাদেশের তরুণরা অনেক সম্ভাবনাময়। এই দেশে তরুণদের আধিক্য আমাদের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নির্দেশক। জনসংখ্যাগত এই সুবিধা ও সুযোগ সব সময় আসে না। কিন্তু এই সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারলে আমাদের মধ্যম আয়ের ও উন্নত দেশের স্বপ্ন থেকে যাবে অধরা। তরুণদের মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনই দরকার তাদের কর্মসংস্থানের পথ সম্প্রসারণও। সম্প্রতি একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা প্রণীত কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার পর্যালোচনা, ২০১৭ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দেশের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। তারা কর্মবাজারে নেই, শিক্ষায় নেই, আবার প্রশিক্ষণও গ্রহণ করছে না। তাদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের এই নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি। ছেলেরা ২৯ শতাংশ এবং মেয়েরা ২২ শতাংশ নিষ্ক্রিয়। বিশ্বব্যাপী এই ধরনের তরুণদের নট ইন এমপ্লয়মেন্ট, এডুকেশন অর ট্রেনিং তথা নিট নামের একটি সূচক দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) পৌঁছুতে হলে অবশ্যই আমাদের এই হার কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

তরুণদের এই নিষ্ক্রিয়তা উদ্বেগজনক। হয় তাদের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নিয়োজিত রাখতে হবে, নতুবা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গত মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তাদের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সম্মেলনে অনুরূপ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪০ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ এই দুই প্রতিবেদনে একটি সামঞ্জস্য রয়েছে। এই প্রতিবেদনের আরেকটি চিত্র হলো, বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার বেশি, যদিও এটি নতুন কথা নয়। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অথচ ভারত ও পাকিস্তানে এই হার ৩০ জন। তরুণদের এই বেকারত্ব তথা নিষ্ক্রিয়তা অপ্রত্যাশিত।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পরিসংখ্যানের মধ্যে একটি বিভ্রান্তি রয়েছে। তারপরও তরুণদের বেকারত্ব ও নিষ্ক্রিয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। সরকারি-বেসরকারি একটি চাকরির জন্য যখন হাজার হাজার, কখনো কখনো লক্ষাধিক আবেদনপত্র জমা পড়ে, তখন এই দুঃসহ পরিস্থিতি উপলব্ধি করিতে অসুবিধা হয় না। তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। অনেক তরুণ আজ চাকরি করার মন-মানসিকতা পরিহার করে চাকরি দেয়ার জন্য তৈরি হয়েছে এবং নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছে নানা প্রতিষ্ঠান। এই দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ সেই সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষা ও পাসের হার বাড়ানোর কারণে সার্বিকভাবে বেকারত্ব বাড়ছে। তবে এর মোকাবেলায়, বিশেষত উচ্চশিক্ষিত বেকারত্ব দূরীকরণে আলাদা ও সমন্বিত কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন। দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর তুলনায় সরকারি চাকরির সুযোগ খুবই কম। তাই তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করতে হবে। একদিকে বেকারত্ব সমস্যা যেমন আছে, তেমনি অন্যদিকে শিল্প-কল-কারখানায় দক্ষ লোকের অভাবও বিদ্যমান যা পূরণে এগিয়ে আসেন বিদেশি লোকজন। অতএব, কাজের বাজারের চাহিদার সাথে শিক্ষাব্যবস্থাকেও সঙ্গতিপূর্ণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষার ক্ষেত্রে অধিকতর জোর দেয়া।