নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলা : প্রত্যাশিত রায়

 

তিন বছর আগে নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যায় ডুবিয়ে দেয়ার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিলো পুরো দেশকে। হত্যাকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এলিট বাহিনী র‌্যাবের কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে এলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও শিরোনাম হয়। আলোচিত সেই হত্যাকাণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছেন। এ মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড। আদালতের রায় ঘোষণার সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নূর হোসেন, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় র‌্যাব-১১’র অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্ত) মাসুদ রানাসহ ২৩ আসামি রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও বাকি ১২ আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েনি। আদালতে গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে এ মামলার আসামিদের বিচার শুরু হয়। ৩৮টি কার্যদিবসে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৬৪ জনের সাক্ষ্য শোনেন আদালত; যাদের মধ্যে ৬০ জন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। দুইপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ৩০ নভেম্বর বিচারক ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। একই সময়ে একই স্থানে আরেকটি গাড়িতে থাকা নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার চালককে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর বন্দর উপজেলা শান্তির চর এলাকায় শীতলক্ষ্যা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকের পেটে ছিলো আঘাতের চিহ্ন; প্রতিটি লাশ ইটভর্তি দুটি করে বস্তায় বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিলো।

আদালতের রায়ের পর এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য মানুষের মাঝে যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিলো রায়ে তা দূর হবে বলেই আমরা মনে করি। আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। এখন দ্রুত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদেরও আদালতের দেয়া প্রাপ্য শাস্তি বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি। এই রায় প্রমাণ করেছে, কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় বরং এই রায় ব্যক্তির অপরাধের বিরুদ্ধে। সেই সাথে অপরাধী যেই হোক তার বিচার সম্ভব-এই শুভ দিকটিই আদালতের রায়ের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন কেউ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অপরাধ করতে না পারে সে দিকটি নিশ্চিত করার জন্যই উচ্চতর আদালতেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিষ্পত্তিক্রমে দ্রুত আদালতের রায় কার্যকর করা প্রয়োজন।