৩৭ বছর পর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের নাম বদলে গেলো

 

স্টাফ রিপোর্টার: পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর চুয়াডাঙ্গার সন্তান ডা. আবদুল মোত্তালিব মালিক (ডা.এএম মালিক) রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের নাম ৩৭ বছর পর বদলে গেলো। এখন থেকে ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের পরিবর্তে ‘চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল’ নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচিতি লাভ করলো। গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব বিএমএম মোজহারুল হক এনডিসি স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে এতথ্য জানা গেছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট ইউনিট গত ১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিট কার্যনির্বাহী কমিটির ৭/১৬ তম সভার সিদ্ধান্ত এবং উক্ত ইউনিটের ১০ ডিসেম্বর প্রস্তাবানুসারে চুয়াডাঙ্গাস্থ ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে ‘চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল’ নামে নামকরণের প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে। সার্কুলারের অনুলিপি চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ ও চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ দফতরে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি ফজলুর রহমান ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে জাতীয় সদর দফতরের মহাসচিব বরাবর একটি পত্র পাঠান। ওই পত্রে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা চক্ষু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল নামে পরিচালিত হয়ে আসছিলো। বর্তমানে কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখা যায় ডা. মালিক পরিবার ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের নামে ৬টি দলিল মূলে ৪৮ হাজার টাকার বিনিময়ে ৭ নং বুজরুকগড়গড়ি মৌজায় অবস্থিত ৮০৫২, ৮০৫৬, ৮০৬২, ৮০৬৭, ৮০৭৩ ও ৮০৮০ নং খোসকাবলা মূলে এস/এ ৫২৮ খতিয়ানে ২৫২৭ দাগে দশমিক ৩৩ শতক জমি বিক্রয় করেন। যা গত আর/এস খতিয়ানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ডা. এএম মালিক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ইউনিট কার্যনির্বাহী কমিটির গত ১ ডিসেম্বর সভায় নাম পরিবর্তনের জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট বিভাগ গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিরোধীতা করেছেন সেইসব ব্যক্তিদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হতে তাদের নাম মুছে দেয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন।

এব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি ফজলুর রহমান জানান, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব মহোদয়ের চিঠিটি আমার হস্তগত হয়েছে। জাতীয় সদর দফতরের অনুমোদনের ফলে এখন থেকে ডা. এএম মালিক রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতালের নাম পরিবর্তন হয়ে চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতাল নামে পরিচালিত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট ডা. আবদুল মোত্তালিব মালিক পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ উপদেষ্টার পদ ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হন। ৩ সেপ্টেম্বর ডা. এএম মালিক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর পদে শপথ নেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর গভর্ণর মালিক পদত্যাগ করেন। ডা. এএম মালিক ১০৩ দিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ডা.এএম মালিক ১৯৭৭ সালে ইন্তেকাল করেন এবং চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এছাড়া তার স্ত্রী জার্মানীর নাগরিক এল ফিদে ফাতেমা মালিক ২০১৫ সালে ইন্তেকাল করেন এবং চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাদের একমাত্র পুত্র রানা মালয়েশিয়া প্রবাসী এবং একমাত্র কন্যা গীতি আমেরিকা প্রবাসী। ডা. এএম মালিক চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার আতাহার হোসেন মল্লিকের ছেলে।