ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অধিদফতর জেগে ঘুমায় : ভাতা পাচ্ছেন বড়লোকের স্ত্রীরা

 

ল্যাকটেটিং ও মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে চরম ঘাপলাবাজি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে ল্যাকটেটিং ও মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র মহিলাদের পরিবর্তে মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন বড়লোকের স্ত্রীরা। লাজলজ্জা আর শরম ত্যাগ করে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৬ মাস পর পর এই ভাতা উঠিয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ সব নারীদের সাজগোজ দেখে অনেক সময় অবাক হন। মাতৃত্বকালীন ভাতা যাদের পাওয়ার কথা তারাই থাকছেন উপেক্ষিত।

অফিযোগ পাওয়া গেছে, ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে মাতৃত্বকালীন ভাতা বড়লোকের স্ত্রীদের আঁচলে বাধা পড়ছে। অফিরে লোকজন টাকার বিনিময়ে দরিদ্র মহিলাদের বাইরে রেখে অর্থ বিত্তশালী পরিবারের স্ত্রীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। যে কারণে চরমভাবে বঞ্চিত জেলার হতদরিদ্র নারীরা। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা মানা হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে আইন মেনে অবস্থাশালীদের স্ত্রীদের দেয়া হচ্ছে।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, সরকার দেশেরে হতদরিদ্র গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ও প্রসব পরবর্তী কোলের শিশু সন্তান যাতে মায়ের বুকের দুধ পায় সে জন্য এ ভাতা দিয়ে থাকে। কিন্তু জেলায় ২ হাজারর ৪৩০ জনের যে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হয় তাদের মধ্যে অনেকেই আইন বহির্ভুতভাবে এ ভাতা নিচ্ছেন।

জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসসূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ও পৌরসভায় দরিদ্র পরিবারের নারীদের সুবিধার্থে এ ভাতা দেয়া হয়। ২ বছর মেয়াদি এ ভাতা’র টাকা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর দেয়া হয়। এর মধ্যে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহয়তা তহবিলের (ল্যাকটেটিং) আওতায় জেলাতে ২৪৩০ জনকে ল্যাকটেটিং ও ৭৩০৮ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ল্যাকটেটিং ভাতা সদর পৌরসভায় ৮০০ জন, কালীগঞ্জে ৩৬০, কোটচাঁদপুরে ৩৬০, মহেশপুরে ৩০০, শৈলকূপায় ৩৬০ ও হরিণাকুণ্ডুতে ২৫০ জনকে দেয়া হয়। অন্যদিকে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে সদর উপজেলায় ১৮৫৩ জন, কালীগঞ্জে ১১৯৯, কোটচাঁদপুরে ৫৫০, মহেশপুরে ১৩০৮, শৈলকূপায় ১৫২৬ ও হরিণাকুণ্ডতে ৮৭২ জনকে দেয়া হয়। এ ভাতা’র টাকা পেতে হলে ভাতা প্রত্যাশীদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ও পৌরসভার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।

আবেদন পত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করে জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসে পাঠায়। সেখান থেকে বাছাই হয়ে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চূড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে দরিদ্র নারীদের বাদ দিয়ে বড়লোকের স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে দেন বলে অভিযোগ। যে কারণে সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এই প্রকল্পটি। এজন্য বঞ্চিত হতদরিদ্র নারীরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যববস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান জনান।

ঝিনাইদহ অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সদর উদ্দীন জানান, ব্যাংকে যে সব মেয়েরা সাজগোজ করে এই ভাতা তুলতে আসেন তাতে সঠিকভাবে তালিকা করা হয় না বলেই ধরে নেয়া যায়।

তবে ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিকভাবে প্রভাব থাকায় আমরা স্বচ্ছভাবে এই তালিকা করতে পারি না। এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার রহমানের মোবাইলফোনে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।