ইবি গবেষকদের সাফল্য সূর্যমুখির নতুন জাত উদ্ভাবন

 

ইবি প্রতিনিধি: ইভিনিং প্রিমরোজ। এটি সূর্যমুখির একটি নতুন জাত। এটির বৈশিষ্ট্য হলো- এটি ফুলদানিতে দীর্ঘক্ষণ টাটকা থাকে এবং ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরে সুবাস ছড়াতে থাকে। এটি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফুল। বাংলাদেশের আবহাওয়া এর চাষাবাদের অনুপযোগী। তবে এখন থেকে এটি বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও জন্মাতে সক্ষম হবে। আর এ কাজটি করে দেখিয়েছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। প্রায় দেড় বছর গবেষণা করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সূর্যমুখির নতুন এ জাত উদ্ভাবন করেছেন।

নতুন জাতের সূর্যমুখি উদ্ভাবন সম্পর্কে গবেষণা টিমের প্রধান ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইভিনিং প্রিমরোজ মূলত শীতপ্রধান দেশের ফুল। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গাছটি অভিযোজন বা জন্মাতে সক্ষম হয়েছি। এরপর ফুল ধরাতেও সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমাদের জন্মানো গাছ এবং ফুল প্রকৃত আকার থেকে সামান্য ছোট। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে আমরা গাছটির ফুলের আকার এবং মানোন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইভিনিং প্রিমরোজ নামের এই ফুলটি কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ব্যবহারিত হবে। যেসব ফুল অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে অথবা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় না সেসব ফুলকে কাট-ফ্লাওয়ার বলা হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তৈলবীজ ও বাগানের শোভা বর্ধনের জন্য নানা জাতের সূর্যমুখি চাষ করা হলেও কাট-ফ্লাওয়ারের কোনো জাত নেই। শীতপ্রধান কয়েকটি দেশে কাট-ফ্লাওয়ার হিসাবে সূর্যমুখির কিছু জাত চাষ করা হলেও বাংলাদেশে সূর্যমুখির কাট-ফ্লাওয়ার জাতীয় কোনো অনুমোদিত জাত নেই। আমরা বাংলাদেশে প্রথম কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। কাট ফ্লাওয়ার হওয়ার কারণে এটি ফুলদানিতে অনেকদিন পর্যন্ত টাটকা থাকে এবং ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরে সুবাস ছড়াতে থাকে। এজন্যই সাধারণ সূর্যমুখির সাথে এর বিস্তর পার্থক্য। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ ফুলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক রোগমুক্ত চারা উৎপাদন এবং ফুল ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছেন তার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে এসব কাজের জন্য প্রচুর অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন বলে জানান ড. জাহাঙ্গীর আলম। গবেষণা টিমে ছিলেন বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানু। তিনি বলেন, হল্যান্ড থেকে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে সূর্যমুখির বীজ এনে বাংলাদেশে চাষের উপযোগী করতে দেড় বছর গবেষণা করেছেন তার বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গবেষণা টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন, বিভাগের ছাত্র মোস্তফা শাকিল, যুবায়ের হুসাইন, সদরুল হাসান চৌধুরী, জহুরুল ইসলাম, জুলকার নাইনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি) এর প্লান্ট বায়োটেকনোলজি বিভাগীয় প্রধান ড. আব্দুন নূর মুহাম্মদ ইফতেখার আলম গবেষণা কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বলে জানান ড. জাহাঙ্গীর আলম।

গবেষণা দলের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী এবং বর্তমানে যশোরসহ বেশ কিছু জেলাতে ফুলের চাষ হচ্ছে। দেশীয় বিভিন্ন ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি ফুল এবং অর্কিড (যেমন গ্লাডিওলাস, জারবেরা ইত্যাদি) চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফুলচাষে বেশ সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশের ফুল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রফতানি হচ্ছে। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। তবে সুযোগ সুবিধার কমতি থাকা সত্ত্বেও ফুলচাষ থেকে রফতানি আয় দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, সামান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব হবে।

গবেষক ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফুল প্রেমিকদের সব সময় নতুন নতুন ফুলের প্রতি চাহিদা থাকে। তারা বার বার একই ফুল পছন্দ করে না। তাই প্রতি বছর বিদেশে থেকে আমাদের নতুন নতুন জাতের ফুলের চারা আনতে হয়। এতে খরচও বেশি হয়। তবে ইভিনিং প্রিমরোজের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ চারা উৎপাদন সম্ভব হয় এবং সারাদেশে এই ফুলের চারা সরবরাহ করা সম্ভব হয় তবে আমরা অতি কম খরচে বিদেশি ফুল উৎপাদন করতে পারবো। আর ক্রেতারাও পারে নতুন নতুন ফুল। ইভিনিং প্রিমরোজ ছাড়াও জারবেরা, স্ট্র ফ্লাওয়ার, টিউলিপসহ আরও বেশ কিছু ফুলের জাত নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।