গাংনী ইউএনও অপসারণের দাবিতে আ.লীগের বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অপসারণের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা ও প্রশাসনের আশ্বাসে চলমান কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। বিকেল ৫টার দিকে গাংনী বাসস্ট্যান্ডে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীরা মিছিলসহ জড়ো হয়। ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার স্লোগানসহ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলে একটি প্রতিকী ঝাড়ু প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উপজেলা পরিষদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রধান ফটক দুটি বন্ধ করে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে বাসস্ট্যান্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, চলমান এসএসসি পরীক্ষার জন্য কর্মসূচিতে ছাড় দেয়া হবে। অপরদিকে প্রশাসনের কয়েকটি দফতরের কর্মকর্তারা আমাদের কথা দিয়েছেন ইউএনও’র বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ কারণে আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করতে চায়। দ্রুত ব্যবস্থা না হলে আবারো রাজপথে আন্দোলন শুরু হবে। বতর্মান সরকারকে উন্নয়নের সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দেশ এখন শান্ত। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অশান্ত হবে এটি আমরা চাই না। দেশের উন্নয়নে কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা আন্দোলন থেকে কিছুটা সময় দিচ্ছি। বুধবার মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ মিছিল ও গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের মানববন্ধনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এসব করে দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করা যাবে না। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে যদি কেউ তাদের পক্ষে কোনো কর্মসূচি করেন তাহলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঘোষণায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয়করণে শিক্ষকদের কোনো টাকা লাগেনি। তাই দফতরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে কোনো প্রকার বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না। টাকা ছাড়াই সুষ্ঠু পন্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকনকে রাজাকারের সন্তান আখ্যায়িত করা মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোন সংবিধান বা আইনে রয়েছে যে, রাজাকারের সন্তান দল করতে পারবেন না? দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন না? তিনি বঙ্গবন্ধুর চেতনায় আওয়ামী লীগ করতে পারবেন না? তাকে যারা প্রথম উপজেলা আ.লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন আজ তারাই তাকে নিয়ে বিতর্ক করছেন। এটি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এসব করে চলমান আন্দোলন দমানো যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি করেন তিনি। সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, আমার পিতা রাজাকার ছিলেন না, মুসলিম লিগ করতেন। আমি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হই। দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছি। দলকে সুসংগঠিত করতে জীবনবাজি রেখে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন সংগ্রাম করে চলেছি। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলে যদি আমার প্রয়োজন না থাকে তাহলে সিদ্ধান্ত নেবেন আপনারা। নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত আমি সব সময় মাথা পেতে গ্রহণ করবো। একটি পক্ষ আমাদের এ আন্দোলন ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা আ.লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক, উপজেলা আ.লীগ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ মোহন, পৌর আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক আনারুল ইসলাম বাবু, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন, যুবলীগ নেতা রিন্টু চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মশিউর রহমান পলাশ।