দুই পায়ের ওপরেই ভরসা : সফলভাবে জেএসসি উত্তীর্ণের পর এবার পাপিয়া বসেছে এসএসসি পরীক্ষায়

 

মেহেরপুর অফিস: জন্ম থেকেই দু হাত অচল হলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তি প্রকোট। প্রতিবন্ধিতাকে পরাজিত করে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মেহেরপুরের স্কুলছাত্রী ববিতা আক্তার পাপিয়া। অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য শুরু করে পড়ালেখা। বড় হয়ে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চায় পাপিয়া। দাঁড়াতে চায় প্রতিবন্ধীদের পাশে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের ঝাউবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইয়ারুল ইসলাম ও গৃহিণী আরিফা খাতুনের ছেলের পর তাদের ঘর আলো করে জন্ম হয় দুই জমজ কন্যা। কিন্তু বাবা মায়ের চোখে দুশ্চিন্তার ভাজ। কারণ ছোট মেয়ে ববিতা আক্তার পাপিয়ার দুই হাত অচল। পা দিয়ে ছাড়া কোনো কাজই করতে পারে না। সহোদর বোন পপি খাতুনকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে পড়ার ইচ্ছা জাগে পাপিয়ার মাঝে। কিন্তু মা কিছুতেই স্কুলে ভর্তি করতে চাননি। তার আবদারে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরামর্শে অবশেষে পাপিয়াকে ভর্তি করা হয় ঝাউবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৫ম শ্রেণিতে পাশ করে ভর্তি হয় গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। জেএসসিতে সাড়ে তিন পয়েন্ট পেয়ে পাস করে সে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে যশোর বোর্ডের অধীনে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে সে। ছোট থেকেই অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি। পাপিয়া তাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হতে চায়। সহযোগিতা করতে চান অন্য প্রতিবন্ধীদের। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছে সে।

ববিতা আক্তার পাপিয়া জানায়, ছোট বেলায় সবাইকে স্কুলে যেতে দেখে তারও ইচ্ছে হয় বিদ্যালয়ে যেতে। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছার কথা পরিবার ও এক শিক্ষিকাকে জানানো হয়। পরে ওই শিক্ষিকা তাকে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করতে বলে। শুরু হয় পা দিয়ে লেখার চেষ্টা। শিক্ষকরা খুশি হয়ে ভর্তি নেন স্কুলে। সেখান থেকেই তার স্বপ্নযাত্রা সূচনা। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। পড়ালেখা শেষ করে দাঁড়াতে চাই প্রতিবন্ধীদের পাশে। তাদের শিক্ষিত করে অবদান রাখতে চাই দেশ ও মানুষের জন্য।

বাবা ইয়ারুল ইসলাম জানান, আমি নিজে কৃষি কাজ করি। দুই মেয়ের পড়ালেখা চালাবার সক্ষমতা আমার নেই। তারপরও অভাবের সংসারে কোনো রকমেই দুই মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ প্রতিবন্ধী মেয়ে কিছু করতে না পারলে অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে হবে। পড়ালেখা শেষ করে একটি চাকরি পেলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এজন্য শত কষ্টের মাঝেও তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালের প্রধান শিক্ষক মিয়ারুল ইসলাম জানান, মেধাবী ছাত্রী পাপিয়া। ফলে বিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে তাকে। কেন্দ্রসচিব অজিত কুমার রায় জানান, নীতিমালা অনুযায়ী তার পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়ের চাইতে অতিরিক্ত ২০ মিনিট বরাদ্দ করা হয়েছে। বোর্ড কর্তৃক এ সুযোগ সব প্রতিবন্ধী ছাত্রীদের জন্য রয়েছে। কারণ স্বাভাবিক ছাত্র-ছাত্রীদের মতো লেখার ক্ষমতা প্রতিবন্ধীদের নেই।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ জানান, পাপিয়ার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। এছাড়াও আরোও যে সব প্রতিবন্ধী নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরও সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।