এসএসসি পরীক্ষার্থী রকিবুল : বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়েও প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন

মাজেদুল হক মানিক: কথা বলতে পারে না, কানেও শুনতে পারে না। সবাই তাকে বোবা বলেই চেনে। শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা সত্ত্বেও হার না মানা এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে রকিবুল ইসলাম (১৬)। এবার সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চমক সৃষ্টি করেছে। অন্য পরীক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষার খাতায় স্বাভাবিক উত্তর লিখে জানান দিলো ইচ্ছে শক্তি থাকলে পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। লেখাপড়া শিখে প্রকৌশলী হওয়ার কথা জানাল রকিবুল। রকিবুল ইসলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার শালদহ গ্রামের কৃষক মহসিন আলীর ছেলে। শালদহ এসআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুগিরগোফা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে রকিবুলের সাথে কথা হয়। ওই কেন্দ্রের তিন নং কক্ষের দ্বিতীয় সারির ছয় নং বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয় রকিবুল। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার পুরো তিন ঘণ্টা সময় সে প্রশ্নের উত্তর লিখেছে। পাশের কোনো ছাত্রছাত্রীর খাতার দিকেও তাকাইনি। ১০০ নম্বরের উত্তর দিয়েছে। মূল খাতার সাথে বাড়তি কিছু কাগজও নিয়েছে। তার পরীক্ষাও ভালো হয়েছে বলে জানান কক্ষ পরিদর্শকরা। কক্ষ পরিদর্শক নজরুল ইসলাম ও খইবার হোসেন জানান, সে যে প্রতিবন্ধী তা আমারা প্রথমে বুঝতে পারিনি। অন্য ছাত্রছাত্রীর মতোই খাতায় উত্তর লিখছিলো। পরীক্ষা শুরুর কিছু সময় পরে যখন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নিচ্ছিলাম তখন বুঝতে পারি। এ ধরনের একজন ছাত্রের জন্য আমরা গর্ববোধ করছি।
জুগিরগোফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক কেন্দ্রসচিব রুহুল আমিন বলেন, রকিবুল তার কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীয় হওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীর জন্য নির্ধারিত তিন ঘণ্টার সাথে আরও আধা ঘণ্টা সময় রয়েছে। কিন্তু আজকের পরীক্ষায় রকিবুলের বাড়তি সময় লাগেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করেছে। কেন্দ্রের তার যাতে কোনো সমস্য না হয় সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে। রকিবুলের বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, সে শ্রেণিকক্ষে আদব-কায়দার মধ্যদিয়ে বসে থাকে। খাতা ও বোর্ডে লিখে তাকে পড়াতে হয়েছে। লেখার মাধ্যমে নির্দেশনা দিলে সে খাতায় লিখে উত্তর দেয়। প্রতিদিনের লেখাপাড়া বাড়ি থেকে করে শ্রেণিকক্ষে এসে খাতায় লিখে দেয়। তার ওপরে বিদ্যালয়ের সবাই খুশি। রকিবুলের সহপাঠী শালদহ গ্রামের জুলেখা খাতুন জানায়, তারা একসাথে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। গ্রাম থেকে তারা একসাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছে। রকিবুলের লেখাপাড়ার জন্য সহপাঠী সকলেই সহযোগিতা করে। রকিবুলের সাথে কথা হলে সে জানায় তার স্বপ্নের কথা। কাগজে প্রশ্ন লিখে দিলে উত্তর লিখে মনের কথাগুলো প্রকাশ করে। লেখাপাড়া শিখে সে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যতোদূর সম্ভব লেখাপাড়া করতে চাই।
পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, শালদহ গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক মহসিন আলীর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে রকিবুল বড়। জন্ম থেকেই সে বোবা-কালা। একমাত্র মেয়ে মুক্তি এসআরবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। তার রোল নং ১। ছোট ছেলে একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ-উজ-জামান বলেন, নিঃসন্দেহে একটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বয়োবৃদ্ধ বাছিরন যেমন সমাজকে আলোকিত করেছে তেমনি রকিবুলও এগিয়ে নেয়ায় উৎসাহ জোগাবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রকিবুলের সহযোগিতা করা হবে। লেখাপাড়ায় তাকে উৎসাহ দেয়া হবে।