প্রসঙ্গঃ অন্যের সম্পদের লোভ সামলাতে না পারা

মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করে বলেই কেউ কেউ বিশ্বাসভঙ্গ করে উল্টো রূপটা দেখায়। সিঙ্গাপুর প্রবাসফেরত এক যুবকের নিকট বিশ্বাস করেই অপর প্রবাসী পৌনে ৪ লাখ টাকা মূল্যের সোনার গয়না দিয়েছিলেন। সেই গয়না নিয়ে দেশে ফিরেই বদলে যায় প্রবাস ফেরত চুয়াডাঙ্গার এক যুবক। নানা ছলচাতুরির পর অবশ্য সোনার গয়নাগুলো পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে ওই যুবকতো বটেই বেশ ক’জনের মুখোশও খুলেছে। এখন তারা নিশ্চয় লজ্জিত। লজ্জা হোক বিবেক জাগিয়ে তুলে শুধরে নেয়ার শিক্ষা। আক্কেল উঠুক সকল অভিভাবকের।
যারা প্রতারণার জন্যই ছলে বলে কৌশলে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা প্রতারক। আর যারা সরলসোজা এবং অন্যের সহযোগিতায় কাজ করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপনের পর বিশ্বাসঘাতকতা করে? তাদের কি প্রতারক বলা চলে। না, ওরা লোভ সামলাতে পারে না বলেই আত্মসাতের চেষ্টা চালায়। একটু সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তির সম্পদ হলে তা আত্মসাত দূরের কথা উগলে দিতে ওরা বাধ্য হয়। যেমনটি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পিরোজখালীর প্রবাসফেরত যুবকের ক্ষেত্রে হয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, ওই যুবক দেশে ফিরেই বদলে যায়। মিথ্যা কথা বলে মোবাইলফোনটি বন্ধ করে রাখে। সেই মোবাইলফোনের সূত্র ধরেই সোনার গয়না নিয়ে প্রবাসফেরত যুবকের ঠিকানায় হাজির হয় পুলিশ। এর আগে প্রবাসফেরত যুবক তার নিকটজনদের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার একটি সোনার অলঙ্কার কেনা-বেচার দোকানে কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই যুবকের আত্মসাত করা সোনার গয়নার কিছু অংশ রাখা হয় স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির কাছে। তিনিও নাকি সোনার ওইসব গয়না আত্মসাতের সহযোগিতা করেছেন। জনপ্রতিনিধিসহ নিকটজনদের ওই প্রবাসফেরতকে সহযোগিতার বদলে যার সোনার গয়না তার লোকের কাছে ফেরত দিতে উদ্বুব্ধ করাটা উচিত ছিলো। সেটা না করে উল্টোটা করার অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করা। যদিও ‘জানিনা, জানতাম না’ যুক্তিই এখন তাদের লজ্জা আড়ালের বড় উক্তি।
আত্মসাতে সহযোগিতা করা না করার বিষয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে প্রবাসফেরত যুবকের সচেতনতা তথা দায়িত্বশীলতায় যে ঘাটতি তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এই ঘাটতির কারণেই তার শিক্ষাসহ পারিপার্শ্বিক পরিচয়টিও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। কেননা, একজন শিশুর মানসিকতা গড়ার অতীবগুরুত্বপূর্ণ শিক্ষালয় তার পরিবার। প্রবাসফেরত ওই যুবক অবশ্যই একদিন শিশু ছিলো। তাকে বিশ্বস্ত মনের মানুষ করে গড়ে তুলতে না পারার দায় তার পরিবারের বড়রা কি এড়াতে পারেন? সকল পরিবারের সকল অভিভাবককেই বিষয়টি ভাবতে হবে।