প্রসঙ্গ: বজ্রপাতে নিহতের কবর থেকে কঙ্কালের খুলি চুরি

সম্পাদকীয়

বজ্রপাতে নিহত কোনো টেকো বা চুল ওয়ালা মাথার খুলিতে কখনোই চুম্বক শক্তি থাকে না, ভুতুম পেঁচাও কখনো কারো গুপ্তধনের সন্ধান দেয়নি। এরপরও কেন এসব নিয়ে রাতের অন্ধকারে অতো মাতামাতি? এসবের মধ্যদিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেয় একশ্রেণির প্রতারকচক্র। অবশ্য কঙ্কালের খুলি চোর বা ভুতুম পেঁচা পাখি কিংবা অন্যকিছু সংগ্রকারীর পকেট থেকে টাকাগুলো যায় না। ওরা অল্প কিছু অর্থ পেলেও মাঝখানে অবস্থান নেয়া ছদ্মবেশী প্রতারক কোনো অর্থলোভীর অর্থ হাতিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে কৌশল বদল করলেও ‘লোভ’ নামক টোপটাই যে ওদের মূল অস্ত্র তা বলাই বাহুল্য।
প্রতারকচক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়। প্রথম অংশ মাঠ পর্যায়ে বিলুপ্ত প্রায় দুর্লভ বন্যপ্রাণী, সীমানা পিলার বা বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির কঙ্কালের খুলি চড়াদামে কেনা হবে বলে প্রচার করে। দ্বিতীয়ভাগের সদস্যরা তা কেনার জন্য বসেও থাকে। তৃতীয় অংশ? ওরাই অর্থশালী কাউকে ফাঁদে ফেলার জন্য লোভের টোপ সামনে ধরে। অর্থশালীর সামনে প্রতারকচক্রের কোনো সদস্য চড়াদামে কেনার নাটকও করে। অর্থশালী তাতে প্রভাবিত হলেই ওদের কেল্লাফতে। চড়াদামে তথা দ্বিগুন তিনগুন দামে বিক্রি করে দেবে বলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই বস্তু বা প্রাণী কিনিয়ে বিক্রির জন্য ওদেরই কেউ সাথে  থাকে। মাঝপথে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়, না হয় সটকে পড়ে। প্রতারণার এ প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সদস্যরা অভিনয়ে থাকে তাদের মধ্যেও অধিকাংশকে ফাঁকে পড়ে ছাড়তে হয় দীর্ঘশ্বাস। মূল রসদটা দলের গোদা বা হোতার হাতেই থাকে।
অলৌকিক অবাস্তব কোনো প্রস্তাবে মাতামাতি মানেই বোকার স্বর্গে বাস করা। প্রতারকচক্রের সদস্যদের কেউ কেউ বোকার স্বর্গে বাস করলেও হোতার হেতু বাস্তবভিত্তিকই হয়। ফাঁদটা তো লৌকিকই। অলৌকিক অবাস্তব কল্পিতগল্পের ফাঁদ যারা পাতে তাদের টিকি ছোঁয়া অতোটা সহজ নয়। তবে ওরা সহজেই অর্থলোভীদের দলে ভিড়িয়ে কবর থেকে কঙ্কালের খুলি চুরি কিংবা বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী ধরতে রাতের অন্ধকারে নামিয়ে দেয় মাঠে। শেষ পর্যন্ত ওদের জন্য থাকে দীর্ঘশ্বাস। আর অর্থশালীদের অর্থলোভীদের কেউ কেউ ওদের ফাঁদে পড়ে করে হায় হায়।