চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের সদস্যদের কাণ্ড : বখরা না পেয়ে ভেঙে দিলো মহিলা মাদককারবারির দু পা

 

দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব চুয়াডাঙ্গাকে মাদকমুক্তকরণের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছে। পুলিশের মাদক বিরোধী সভা-সমাবেশ ও বিজিবি সীমান্তে দফায় দফায় মাদকরোধে অব্যাহত বৈঠক করছে। পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য যখন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কতিপয় সদস্য বখরা আদায়ে মেতেছেন। উৎকোচের টাকা বাড়াতে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক বিশ্বাস মফিজুল ইসলাম ও তার জামাতা এসআই আকবর আলী, সিপাহী আ. রশিদ, সোহরাব, হেলাল ও সোহেল চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। রাত-দিন অবিরাম মাদককারবারীদের ঠিকানায় দৌড়ঝাঁপ আর বখরা আদায় যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে অতিরিক্ত ফায়দা আদায় ও চুক্তির দর বাড়ানোর মূল ভূমিকায় থাকেন আকবর আলী ও রশিদ। কোনো মাদককারবারী এ ধান্দা থেকে নিজেকে গুটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেই মুশকিল। মফিজুল ও আকবরসহ অভিযুক্তরা তড়িৎ গতিতে পৌঁছে যাবে সেই মাদককারবারির কাছে। পরিষ্কারভাবে জানানো হয়, মাদককারবার করিস বা না করিস তা দেখার দরকার নেই, আমাদের পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের ভয়ে মাদক কারবার ছেড়ে দিলেও মাদকদ্রব্য অধিদফতরের ওই বাহিনীর কতিপয় সদস্যের কাছ থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে হয়রানি, মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলায় ফাঁসিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে দেয় তারা। কয়েকজন মাদককারবারীর কাছ থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কথিত ক্যাশিয়ার আকবর আলী ও আ. রশিদ চুক্তিমাফিক দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক হারে অর্থ আদায় করে থাকেন। অভিযানের নামে গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় মহিলাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, শ্লীলতাহানি ও মারধরের ঘটনায় মফিজুল, আকবর ও রশিদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গোটা এলাকাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়ার গাংধারপাড়ার অভিযুক্ত মাদককারবারী ইকরামুল চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার অপরাধে তার বাড়িতে হয়রানিমূলক অভিযান চালানো হয়। ইকরামুলের ঘরের মালামাল তছনছসহ শ্যালিকা রোকসানাকে শ্লীলতাহানি ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ ওঠে। গত মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের মফিজুল ইসলাম, আকবর আলী, আ. রশিদ, সোহরাব, হেলাল ও সোহেল অভিযান চালান আকন্দবাড়িয়া তামালতলাপাড়ার অভিযুক্ত ফেনসিডিল কারবারী সাহেরা খাতুন ওরফে ছোট বুড়ির বাড়িতে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বাড়িতে তছরূপ করেই ক্ষ্যান্ত হননি তারা। মহিলাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। ছোট বুড়ির অভিযোগে জানা গেছে, কথিত ক্যাশিয়ার আকবর আলী ও আ. রশিদের প্রস্তাবের মাসে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে অস্বীকার করার অপরাধেই তারা এ অভিযানের নামে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় মাদকদ্রব্যের সদস্যের অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ ছোট বুড়িকে টানাহেঁচড়া করেছে। একপর্যায়ে তাদের হাতে থাকা শাবল দিয়ে ছোট বুড়ির দু পা ভেঙে দিয়েছে। পরে প্রতিবেশীরা ছোট বুড়িকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দর্শনার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখে। গতপরশু রোববার হাসপাতাল থেকে ছোট বুড়িকে বাড়িতে আনা হয়েছে। বিছানায় শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে ছোট বুড়ি বলেন, তাদের নিয়মিত পয়সা দিয়ে মাদককারবার করি, তাই বলে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার সামর্থতো আমার ছিলো না। আমাকে মাদকদ্রব্যসহ যদি হাতেনাতে ধরতে পারতো, তবে আমার নামে কেস দিয়ে জেলখানায় ভরে দিতো। এজন্যতো আমার পা দুটো ভেঙে দিতে পারেন না তারা। ছোট বুড়ি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাছে বিচারের দাবি তুলেছেন। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা মাদকদ্রব্য অধিদফতরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।