মুন্সিগঞ্জ-পারকৃষ্ণপুর পয়েন্টে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতু নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে

 

উদ্বোধন হতে পারে ২৬ মার্চ : পূরণ হতে চলেছে ২০ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় মুন্সিগঞ্জ-পারকৃষ্ণপুর পয়েন্টে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতু নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ সেতুটি মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সেতুটি ঘিরে নদীর দুই পারের হাজারো মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আলমডাঙ্গাবাসীর দীর্ঘপ্রতীক্ষিত সেতুটি অবশেষে চালু হতে চলেছে। আগামী স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে এটি উদ্বোধনের লক্ষ্য রয়েছে। সেতুটি এ এলাকায় সড়ক যোগাযোগে নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
এলজিইডির তত্ত্বাবধানে টেকসই গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (শ্রিপ) আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার এমএম অ্যান্ড এসডি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) সেতুটি নির্মাণ করছে। এতে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জার্মানির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেএফডব্লিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। ৯০ মিটার লম্বা ও ২৪ ফুট চওড়া গার্ডার সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪ টাকা।

এলজিইডিসূত্র বলছে, সেতুর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন মানুষ ও যান চলাচলের উপযুক্ত করতে সংযোগ সড়কের (অ্যাপ্রোচ রোড) নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়া সেতুটিকে আলমডাঙ্গা-মেহেরপুর পথের বাইপাস হিসেবে কাজে লাগাতে ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে পারকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে মাজহাদ গ্রাম পর্যন্ত দুই কিলোমিটার নতুন সংযোগ সড়ক (লিংক রোড) তৈরি হচ্ছে। সেতুটি উদ্বোধনের দিন এ রাস্তাও উদ্বোধন করা হবে।

এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই সেতুটি চালু হলে মাথাভাঙ্গা নদীর দুই পারে অবস্থিত জেহালা, খাদিমপুর, চিতলা ও গাংনী ইউনিয়নের মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই বদলে যাবে। এলাকার কৃষি ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন সেতুর নিচ দিয়ে বাঁশের তৈরি সাঁকো দিয়ে দুই পারের মানুষ নদী পার হচ্ছে। সাঁকোর পাশেই একটি নৌকা আধো ডোবা অবস্থায় রাখা। নদীতে গোসল ও দুরন্তপনায় ব্যস্ত একদল শিশু। সেতুটির পূর্ব প্রান্তে সংযোগ সড়কটি পিচ ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তে সংযোগ সড়কে চলছে বালু ভরাটের কাজ। এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আকমল হক তা তদারকি করছেন। নবনির্মিত সেতু হয়ে পারকৃষ্ণপুরে গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীর সাথে কথা হয়। কৃষক ইমান আলী বলেন, আমাগের অনেক দিনির স্বপ্ন ছিইলো এইকেনে এট্টা ব্রিজ হবে। সেই স্বপ্ন এবেড্ডা বাস্তব হচ্চে।

বেসরকারি চাকরিজীবী একরামুল হক জানালেন, দুই পারের ২০ গ্রামের বাসিন্দারা বংশপরম্পরায় গ্রীষ্মে সাঁকো দিয়ে এবং বর্ষাকালে নৌকায় নদী পার হয়ে থাকে। নদীতে একাধিকবার নৌকাডুবি ও প্রাণহানি ঘটেছে। এই সেতু এলাকাবাসীর কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। সেতুর পূর্ব প্রান্তে মুন্সিগঞ্জের সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪ শতাধিক। এর অর্ধেকের বেশি নদীর ওপারের বিভিন্ন গ্রামের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আহাদ আলী মোল্লা বলেন, সেতুটি চালু হলে এসব শিক্ষার্থীর বড় উপকার হবে। তিনি আরও বলেন, নদীটির ওপর সেতুর দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের।