প্রশ্নপত্র ফাঁস : অবক্ষয়ের চরম চিত্র

 

এসএসসির গণিত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এই অভিযোগ ওঠার পরও এ প্রশ্নপত্র দিয়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেটির সাথে পরীক্ষা নেয়া প্রশ্নের শতভাগ মিল ছিলো বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে পরবর্তীতে আবার অন্যভাবে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। প্রশ্নপত্র যখনই ফাঁস হোক ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষা নেয়ার প্রশ্নের মিল রয়েছে এটিই হলো মূল কথা।

প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার মতো ব্যাধির এতোকিছুর পরও উপশম করা সম্ভব হচ্ছে বিস্ময়ের বিষয় সেটিই। এমন চিত্র যে চরম অবক্ষয়ের এ আর বলার অবকাশ রাখে না। বিষয়টি যেমন লজ্জা ও গ্লানির তেমনি চরম উদ্বেগেরও। যে দেশে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়, সে দেশে এসএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তুলনামূলক বিচারে যতোই খাটো হোক তা অবশ্যই ধিক্কারযোগ্য। অতীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে একবার যে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিলো সেই পরীক্ষা দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেও একই ঘটনা ঘটেছিলো। এ থেকে খুব সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, অবক্ষয়কারীদের শিকড়-বাকড় কতোটা বিস্তৃত ও সামগ্রিকভাবে সমাজচিত্র কতোটা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এ ব্যাধি যে টোটকা কোনো দাওয়াইয়ে সারবে না তাও অনুধাবন করা কষ্টকর নয়। অতীতে স্কুল-কলেজ এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারি বারবার উদঘাটিত হয়েছে বটে কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা যায়নি। কেন? সদুত্তর মেলা দুরূহ কোনো বিষয় নয়। অতীতে যতোবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে তারপর মিডিয়ায় কিছুদিন হইচই হয়েছে এবং সে কারণেই প্রশাসনের সাময়িক তৎপরতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু একপর্যায়ে যখন আবার সব থেমে যায় তখন অশুভ শক্তি তাদের হীনকর্ম সাধনে আবার তৎপর হয়ে ওঠে।

মানবিক মূল্যবোধ কীভাবে ক্রম লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি এর একটি দৃষ্টান্ত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ব্যাধি কিংবা অপ্রক্রিয়া অনতিবিলম্বে বন্ধ ও অপশক্তির শিকড় উৎপাটন যদি করা না যায় তাহলে প্রকট হয়ে উঠবে আস্থার সঙ্কট এবং তা হবে দেশ-জাতির জন্য আরও ক্ষতিকর। প্রতারকদের দৌরাত্ম্য ও অশুভশক্তির সব রকম কারসাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। এসব বিষয়ে এ যাবত কথা হয়েছে বিস্তর কিন্তু কাজের কাজ কতোটা কী হয়েছে বিদ্যমান বাস্তবতা এই প্রশ্ন পুনর্বার দাঁড় করিয়েছে। আস্থার সঙ্কট, অবিশ্বাসের নেপথ্যের মূল কারণ সামাজিক অবক্ষয়। সামাজিক পরিস্থিতি এমন একপর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে যেখানে ব্যক্তি বা মহলবিশেষ প্রধান হয়ে দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত ঢেকে যাবে অন্ধকারে যা শুভবোধসম্পন্ন কারোরই কাম্য হতে পারে না। এই সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সামাজিক মূল্যবোধগুলো নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড নিশ্চিত করা।

শর্ষের ভেতরে ভূত রয়েছে এমন অভিযোগ ইতোমধ্যে বহুবার উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগ যে অমূলক নয়। ভবিষ্যতে যেন এমন কোনো ঘটনা আর না ঘটে এ ব্যাপারে সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে কালক্ষেপণ না করে। দুষ্টুচক্রের হোতাদের মূলোৎপাটনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নির্মোহ অবস্থান নিয়ে যথাযথসহ প্রতিকারে নিষ্ট হবেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্র অনেক দিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। চিরাচরিত অভ্যাসমতো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, এটা স্রেফ গুজব, ইত্যাদি বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা চলবে না। এই ন্যক্কারজনক অপরাধের যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিত হোক।