সোনার গয়নার জন্য দুই শিশু খুন

 

স্টাফ রিপোর্টার: আদালতে স্বীকারোক্তি চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই শিশু হত্যার ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোসংকরবাটি ভবানীপুর এলাকায় ক্ষোভ আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুই শিশু মেহজাবিন আক্তার মালিহারকে (৬) বুধবার ও সুমাইয়া খাতুন মেঘলাকে (৭) গতকাল বৃহস্পতিবার দাফন করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেল থেকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন লাকি আকতার।

তাতে তিনি বলেছেন, ওই শিশুদের গায়ে থাকা সোনার গয়নার জন্যই তাদের হত্যা করেন তিনি। গয়নাগুলো বাজারে পলাশ নামে এক জুয়লোরির দোকানে বিক্রি করে ২১ হাজার টাকা পান। বুধবার রাতে নিজ দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি.এম মোজাহিদুল ইসলাম।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া লাকির শ্বশুর ইয়াসিন আলী (৬৫) ও শাশুড়ি তানজিলা খাতুন (৫০) এবং গিতা রাণী পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং লাকি আকতারকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার স্মৃতি জুয়েলার্সের মালিক আঙ্গরিয়াপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলামের ছেলে পলাশ (৩০) কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম।

প্রতিবেশী লাকি আকতারের হাতেই দুই শিশু হত্যার ঘটনায় ওই এলাকায় ছিলো হাজারো মানুষের ভিড়। লাকির মেয়ে ছিলো মালিহার বান্ধবী। এই লাকি মা হয়েও কীভাবে সুমাইয়া ও মালিহাকে হত্যা করলো, সবার মনে একটাই প্রশ্ন। এমন লোমহর্ষক ঘটনায় এলাকার অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে।

এদিকে সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে দুই পরিবার। থেমে থেমে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন এবং জ্ঞানও হারাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। মালিহার মা তাজরিন বেগম বলেন, আমার মেয়েকে যে মেরেছে, আমি তার ফাঁসি চাই। সুমাইয়ার খালা ফাতেমা বেগমও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সুমাইয়া-মালিহাদের স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো, শিক্ষকরাও কাঁদছেন তাদের প্রিয় দুই ছাত্রীকে হারিয়ে। ছোটমনি বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মো. সোহেল রানা বলেন, সুমাইয়া ও মালিহা তাদের স্কুলে পড়ত, খুবই ভালো ছিল মেয়ে দুটি। তাদের যে এভাবে মেরে ফেলা হবে আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিচাই।

ওই দুই শিশুর ময়নাতদন্তে অংশ নেয়া চিকিত্সক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা যে আলামত দেখেছি তাতে মনে হয়েছে শিশু দুইটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কতো সময় আগে তাদের মৃত্যু হয়েছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে আমাদের ধারণা শিশু দুটিকে ২৪-৩৬ ঘণ্টা আগে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলেই তা জানানো সম্ভব হবে কীভাবে তাদের খুন করা হয়।