হঠাৎ আলোচনায় খালেদার মামলা

 

স্টাফ রিপোর্টার: যতোই দিন গড়াচ্ছে, ততxই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক বিচারাধীন মামলার রায় ঘনিয়ে আসছে। এর মধ্যে এক বা একাধিক মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে বলে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে। ঠিক এই সময়ে খালেদা জিয়া জেলে গেলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ক্ষমতাসীন দলের চার মন্ত্রী এই ইস্যুতে কথা বলে উত্তাপ ছড়িয়েছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুটি মামলা নিয়েই এখন রাজনীতিতে সরব আলোচনা চলছে। বিএনপি প্রধানের সাজা হলে বিএনপির নেতৃত্বে কারা থাকবেন, এমন খবরও প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপির মহাসচিব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এ নিয়ে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং খাদ্যমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভারতের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার মামলা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আদালতে রায় হলে খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অযোগ্য হন, তাহলেও বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে আসবে। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ বিএনপির আগামী নির্বাচন আটকানোরও সামর্থ্য নেই বলে মনে করেন তিনি। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। কারও যদি নূ্যনতম দুই বছর সাজা হয়, তাহলে তিনি ৫ বছর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে তার সাজা হবে কিনা, সেটা বলা সম্ভব নয়। আইন কী বলে, বিচারে কী হবে, সেটা ভবিষ্যত বলতে পারে। বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্য প্রসঙ্গে তোফায়েল বলেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মহাসচিব। তাকে অনেক কথা বলতে হয়। যা তিনি বিশ্বাস করেন না, তাও বলতে হয়। যা বলেন, তা নিজেও বিশ্বাস করেন না। বিএনপি যা-ই বলুক না কেন, নির্বাচন এই সরকারের অধীনেই হবে। একই বিষয়ে র‌্যাডিসন হোটেলের সামনে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি কারাগারে যাবেন কি-না, তিনি মাফ পাবেন কি-না, সেটা আদালত বলতে পারবেন। সময় ও নদীর ঢেউ যেমন কারও জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি বাংলাদেশের সংবিধান এবং নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইন সবার জন্য সমান; কেউ আইনের বাইরে নয়। যে যতোটুকু পরিমাণ অপরাধ করবে, তাকে সেই পরিমাণ শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হলে দলটি দুই-তিন ভাগে বিভক্ত হয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবেই। এখন তারা শুধু সমালোচনার খাতিরে নতুন নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন বানচাল করার শক্তি বিএনপির নেই। খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি দ্বিধা-ত্রিধাবিভক্ত হবে। এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে এমন শঙ্কায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার অনুপস্থিতিতে কিভাবে দল পরিচালিত হবে, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় জিয়া পরিবাবের কারো নেতৃত্বে অথবা যৌথ কমিটির মাধ্যমে দল পরিচালনার কথা ভাবা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের অর্থ দুর্নীতির দুই মামলার বিচারকাজ চলার পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহসহ নাশকতার অভিযোগে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন থেকে বিএনপির শুরু করা সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। তবে থানায় আদালতের পরোয়ানা পৌঁছেনি জানিয়ে বিএনপি নেত্রীকে সেই সময় গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পরে আদালতে গিয়ে জামিন নেন খালেদা জিয়া।