হাজার রোহিঙ্গার প্রাণহানির পর সেনা অভিযান বন্ধ মিয়ানমারে

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: চার মাসের হত্যাযজ্ঞ, দমন-পীড়নের পর রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এ ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মতে, গত চার মাসের ওই সেনা অভিযানে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছে। এই অভিযানকে জাতিসংঘ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগত নির্মূল করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে আগেই জানিয়েছে। গত অক্টোবরে একাধিক পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে। তারপর থেকেই দেশটির বঞ্চিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ঢালাও হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে। যদিও এসব অভিযোগ সেনাবাহিনী ও দেশটির সরকার বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। সেনা অভিযানে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগে বহু রোহিঙ্গা মুসলিমের হতাহতের ঘটনায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ভূমিকাও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা ও চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে রাখাইনে সেনা অভিযান শেষ করার ঘোষণা এসেছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার অং সান সু চির কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সেনা অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে এবং এলাকাটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিবৃতিতে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছ, উত্তর রাখাইনের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। সেনা অভিযান বন্ধ, কারফিউ শিথিল এবং শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে সেখানে কিছু পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। সেনা অভিযান নিয়ে সমালোচনার মুখে গঠিত সাবেক সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা প্রমাণ করেছি কোথাও কোনো নৃশংসতার প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এদিকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার কথা জানিয়ে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা নিশ্চিত করেছে। তবে শীর্ষ দুজন সেনা কর্মকর্তা শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে বলে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যা নতুন সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞে লিপ্ত। ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন এবং সহিংসতার ভয়ঙ্কর সব সাক্ষ্য প্রকাশ করা হয়। রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা এক মহিলা জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন, তাকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে বাঁচাতে আসলে হামলাকারীরা গলাকেটে তাকে হত্যা করে। সাক্ষ্যদানকারী রোহিঙ্গারা আরো জানিয়েছেন, সেখানে অনেক রোহিঙ্গা পরিবারের সবাইকে তাদের বাড়িতে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের স্কুল, মসজিদ, খেতের ফসল এবং গবাদি পশু। একই সঙ্গে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে নিপীড়নের মুখে অন্তত ৯২ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বসবাস রয়েছে কিন্তু দেশটি তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। গত সপ্তাহে পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, শুধু ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির কারণেই রোহিঙ্গারা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছেন।