গুরুতর আহত ভ্যানচালক হাসপাতালে : সমর্থক বানাতে হাতুড়িপেটা!

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভ্যান চালিয়ে পাঁচজনের সংসার চালান ইলাহি হোসেন ওরফে আনন্দ বিশ্বাস (৩২)। গতকাল শুক্রবার সকালেও বাড়ি থেকে বের হন সে উদ্দেশেই। কিন্তু ভ্যানের প্যাডেলে পা রাখা আর হয়নি। প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় গুরুতর আহত হয়ে হতদরিদ্র ইলাহির ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। ইলাহি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামের ইউসুপ আলী বিশ্বাসের ছেলে। পরিবার বলছে, হামলাকারীদের সামাজিক দলে যোগ দেননি, এটাই ইলাহির অপরাধ (!)।

বাবা ইউসুপ আলী বলেন, তারা খেটেখাওয়া মানুষ। দলাদলি করার সময় তাদের নেই। তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ছেলে ইলাহি ভ্যান চালিয়ে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার চালান। তবে তারা হরিশংকরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামানের পক্ষে ভোট দেন। গত ইউপি নির্বাচনেও তারা ফরিদুজ্জামানকে ভোট দিয়েছেন। তবে তিনি পরাজিত হন। নির্বাচনে জয়ী চেয়ারম্যান আল-মামুন ওরফে মাসুমের পক্ষের লোকজন তখন থেকেই তাদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। ওই পক্ষটি কখনো চাঁদা দাবি করে, কখনো তাদের সভা-সমাবেশে যেতে চাপ দেয়। চাপে পড়ে তারা চাঁদা দিয়েছেনও। তবে সোজাসুজি বলে দিয়েছেন, কোনো পক্ষের কার্যক্রমেই যেতে পারবেন না। এতে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো আল-মামুনের পক্ষটি।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইলাহির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে আছে। বেশি মার পড়েছে দুই পা ও বাঁ হাতে। শরীরের অন্যান্য স্থানেও কমবেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ইলাহি বলেন, গতকাল সকাল ৭টায় তিনি বাড়ি থেকে বের হন। উদ্দেশ্য, ঝিনাইদহ শহরে গিয়ে ভ্যান নিয়ে বের হবেন। গ্রামের নূর আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তার মোড়ে গিয়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এ সময় বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী আকস্মিকভাবে তার ওপর হামলা চালায়। তাদের কয়েকজনকে চিনতে পেরেছেন, যারা এ গ্রামেরই বাসিন্দা। হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে তার সারা শরীরে পেটায়। এরপর গুরুতর আহত করে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

এ ঘটনায় ইলাহির বাবা ইউসুপ আলী ঝিনাইদহ সদর থানায় বেলা ১১টার দিকে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত পোড়াবাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা সোনাই মোল্লা। হরিশংকর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ইলাহি ও পরিবারের লোকজন তার (ফরিদুজ্জামান) সমর্থক, এটাই অপরাধ। প্রতিপক্ষ নিজেদের সমর্থক বানাতে তাকে পিটিয়েছে। কিন্তু পিটিয়ে কাউকে কখনো সমর্থক বানানো যায় না। তবে ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আল-মামুন ওরফে মাসুম গতকাল ১২টার দিকে বলেন, যারা অভিযোগ করছেন, তারা ঠিক বলছেন না। তিনি বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর থানায় অবস্থান করছেন। আশা করছেন, একটা সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, গোলমালকারী যে-ই হোক, তার উপযুক্ত বিচার তিনিও চান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটা খুব বেশি গুরুতর নয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে। এ কারণে এখনো মামলা নেয়া হয়নি।