স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের জন্যই রুখতে হবে ওই চক্রান্ত

এক সময় এক আনায় অনেক কিছু হতো। এখন? হাজার টাকার একখানা কড়কড়ে নোটেও থলে ভরে না। এ হয় তো ও হয় না। কেন? কালের বিবর্তন বা সময়ের ¯্রােত। তাই বলে এক, দু বা পাঁচ টাকার কয়েন অচল করার চক্রান্ত মেনে নেয়া যায় না। এ চক্রান্তের কারণে বহু স্বল্পপুঁজির ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রতিকারে সরকারি তেমন উদ্যোগ? কর্তাদের কানেই হয়তো এখনও পৌঁছুয়নি অল্প মানের কয়েন-টাকার নোট নিয়ে বিপাকে পড়া ব্যবসায়ীদের আহাজারি-আর্তনাদ।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, গুজব তখনই গুরুত্ব পায় যখন সংশ্লিষ্ট কোনো দফতরের কেউ কেউ সেই গুজব উসকে দেয়ার মতো আচরণ করে। কোন কয়েন চুম্বকে ধরছে কোনটি ধরছে না, কোনটি আসল কোনটি নকল তা নিয়ে গুজব দীর্ঘদিন ধরেই ঘুরছে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাটবাজারে। একই সাথে ব্যাংকে কয়েন ও অল্প মানের টাকার নোট নেয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো ব্যাংকের কোনো কোনো শাখা তো দশ টাকার নোটও নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। মাঝে মাঝে তা নিতে অস্বীকৃতিও জানাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় কমতি রাখেননি। ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অল্প টাকার নোট এবং কয়েন গুনতে কষ্ট? নাকি রাখাতে বড় ভল্ট লাগে বলে নিতে অনীহা? মাঝে কয়েন নিয়ে সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলে অর্থমন্ত্রী ষ্পষ্টভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলেন, যে ব্যাংক’র যে শাখা খুচরা টাকা ও কয়েন নেবে না, সে সব ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘোষণার পর কিছুদিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সমস্যা যে দূর হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাদের ব্যবসার পণ্য অল্প টাকায় বিক্রি তাদের অধিকাংশেরই পুঁজি স্বল্প। অল্প টাকার পণ্য বিক্রি করে খুচরা নিতেই হয়, সেই খুচরা যখন ব্যাংকে নেয় না তখন পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এরপর যখন একশ্রেণির ধান্দাবাজেরা গুজব রটিয়ে কমিশনে কয়েন কেনার ফাঁদপাতে তখন স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীকে পথে বসার বিষয়টি অনেকটাই অনিবার্য হয়ে ওঠে। হচ্ছেও তাই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য যতো দ্রুত সরকারের দায়িত্বশীল বিভাগ নড়েচড়ে বসে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেবে ততোই কল্যাণ।
ধরিত্রীর আপন ধারায় বদলানোটাই বিবর্তন। সময়ের ¯্রােতে প্রয়োজনের তাগিদেই কড়ির বদলে আনতে হয়েছে কয়েন। কয়েনের সাথে সাথে ছাপতে হয়েছে কাগজও। ষলো আনার হিসেব ক’দিনের মধ্যেই তো শতকের হিসেবে উন্নীত করতে হয়েছে। ১শ, ৫শ’র পর ১ হাজার টাকার নোট বাজারে ছাড়ার ইতিহাসও এইতো সেদিনের। এখন দু হাজার টাকার নোটই শুধু নয়, ৫ হাজার টাকার নোটও আসি আসি অবস্থায়। তাই বলে সময়ের আগেই অল্প মানের টাকার নোট-কয়েনকে বিদায় জানানোর চেষ্টা, নাকি ষড়যন্ত্র? স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের জন্যই রুখতে হবে ওই চক্রান্ত।