সঠিক পথ দেখানোটাই তো দায়িত্বশীলের কাজ

কন্যার সকল পিতা মাতারই স্বপ্ন থাকে সুপাত্রের হাতে তুলে দেয়া। কখনো কখনো কোন কোন অভিভাবক উড়নচ-িকে শাদাচোখে দেখে সুুপাত্র ভেবে বড় ভুল করে বসেন। যেমনটি ভুল করেছেন চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারী গ্রামের পলির পিতা। এরকম ভুল যে সমাজে ভুরি ভুরি তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। কেন? হুঁচুকে মেতে হিতাহিত জ্ঞান হারানোর মতো অসচেতনতা।
কন্যা এখন আর বোঝা নয়, মেয়েদের নিখরচায় লেখাপড়ার সুযোগের পাশাপাশি চাকরিতেও সমতার নামে অগ্রাধিকার। তাহলে কন্যাকে পাত্রস্থ করার জন্য হুড়োহুড়ি করা কি বোকামি নয়? রাজমিস্ত্রির জোগাড় দেয়া জোগালের কাজ করতে এসে কী এমন যাদুর কাঠি নাড়লো যে তার সাথে অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ে দিতে হলো কন্যাকে? এ পাত্র হাতছাড়া হলে অমন ছেলে পাবো না বলে যে অভিভাবকেরা হুড়োহুড়ি করে অপ্রাপ্ত বয়সেই কন্যাকে বিয়ের আসনে বসতে বাধ্য করান তাদের সচেতনতায় ঘাটতির বিষয়টি স্পষ্ট। কন্যার প্রতি দায়িত্বশীল করার জন্যই মূলত বাল্যবিয়ে রোধে আইন প্রয়োগে সরকার আন্তরিক। এরপরও গ্রামবাংলায় হারহামেশাই বাল্যবিয়ে হচ্ছে। বাল্যবিয়ের শিকার অসংখ্য কিশোরী বধূ হয় স্বামী পরিত্যাক্ত হয়ে পিতার ঘাড়ের বোঝা না হয় রোগাক্রান্ত হয়ে জীবনটাই বিষিয়ে উঠেছে তার। এরপর যখন কোন দরিদ্র পিতার ঘরজামাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেখে সটকে পড়ে তখন কিশোরী বধূর সন্তান কতোটা বোঝা হতে পারে তা বিবেকবানদের বুঝতে বোধ হয় বেগ পেতে হবে না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর কন্যাসন্তানকে অন্যের কোলে তুলে দেয়ার জন্য মেতে ওঠা প্রতারিত কিশোরী বধূ পলিকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিত্র উঠে এসেছে তা কষ্টের। সহানুভূতিরও। আপত্তি তখনই যখন সন্তান অন্যের কোলে তুলে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়, অর্থাৎ বিক্রি। ওরা মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে আইনত অপরাধই শুধু করেনি, অর্থলিপ্সুতার প্রকাশ ঘটিয়ে হীনমানসিকতারই পরিচয় দিয়েছে। অবশ্য সেটা ওদের অভাবের কারণেও হতে পারে। সে অভাব জ্ঞানের, সে অভাব অর্থের। তাছাড়া ছোটপুটিমারী গ্রামে অবশ্য সচেতন মানুষ রয়েছেন। তাদের একজনও কি ওই সময় বহিরাগত অপরিচিতের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে বারণ করেছিলেন? অপ্রাপ্ত বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে কতোবড় ক্ষতি হয় সেটাও কি জানানো হয়েছিলো পপির দরিদ্র পিতা মাকে? অনেকেই বলবেন, বাধা দিতে গেলে যদি শুনতে হতো, ওরা আমাদের ভালো চায় না বলেই বিয়ে দিতে দিচ্ছে না। তাছাড়া কার দায় কে নেয়! এরকম মন্তব্য করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া নিশ্চয় সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়।
প্রতারিত কিশোরী বধু সত্যিই বড় অসহায়। তা না হলে গর্ভধারিণী মা কি কখনো সন্তানকে অন্যের কোলে দিতে চায়? গ্রামবাংলায় ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য এরকম অসহায় মা। এদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর পাশাপাশি যে কারণে ওদের অসহায়ত্বতা সেটা দূর করতে দরকার সচেতন মানুষগুলোর দায়িত্বশীলতা। সঠিক পথ দেখানোটাই তো দায়িত্বশীলের কাজ।