পরকীয়াকে সাথে নিয়ে স্বামী রাজাকে হত্যা করেছে স্ত্রী জেসমিন

চুয়াডাঙ্গায় হত্যার পর লাশ ঘরের সিলিঙে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা ব্যর্থ

 

স্টাফ রিপোর্টার: পরকীয়া প্রেমিককে সাথে নিয়ে স্বামী রাসেল হক রাজাকে হত্যার পর লাশ ঘরের সিলিঙে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার গল্প ফাঁদলেও শেষ রক্ষা হয়নি স্ত্রী জেসমিনের। গতপরশু শনিবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার রাসেল হক রাজাকে তার নিজ বাড়িতেই হত্যা করা হয়। গতকাল রোববার সকালে মৃতদেহে আঘাতের দাগ দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। জেসমনিকে ধরে পুলিশে দেয়ার পরপরই সে তার স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

এদিকে রাজা হত্যার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার নারী-পুরুষ ফুঁসে ওঠে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মিছিল নিয়ে থানার সামনে হাজির হন তারা। এ সময় সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, খুনিরা কোনোভাবেই পার পাবে না। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজনীয় সকল প্রকারের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ আশ্বাসে আশস্ত হয়ে মিছিলকারী শতাধিক নারী-পুরুষ বাড়ি ফেরেন।

জেসমিন (৩০) তার বোন নাসরিন ও এদের মা জাবেদা খাতুনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার গারদে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার এদের আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে। জেসমিন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে বলেছে, তার পরকীয়া প্রেমিকের নাম বাবু। বড় বোনের দেবর। বিদেশে থাকতো। কয়েক মাস আগে দেশে ফিরেছে। গতপরশু শনিবার সন্ধ্যায় বাবু তার এক বন্ধুকে সাথে করে নিয়ে আসে। পরিকল্পিতভাবে বাবু সন্ধ্যায় আমার স্বামীকে হত্যা করে। বাবু আমার স্বামী রাজার মুখ বালিশ দিয়ে চেপে ধরে আর আমি ধরে রাখি পা। এর আগে বাবুর বন্ধু আমার স্বামীর মাথায় আঘাত করে। মারা গেলে লাশ ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঘরের সিলিঙ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে রাসেল হক রাজার সাথে ১৭ বছর আগে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী পলাশপাড়ার মৃত শহিদুল ইসলামের মেয়ে জেসমিন খাতুনের। বিয়ের পর দু সন্তান আসে এদের সংসারে। ছেলে গোলাম রসুলের বয়স বর্তমানে ১০ বছর আর মেয়ে আয়েশার বয়স ৭ বছর। রাজা এক সময় কেজিএন পরিবহনের সুপারভাইজারি করলেও পরবর্তীতে সে চাকরি ছেড়ে দুটি অটো কিনে ভাড়া দিয়ে বেশ ভালোই চালাচ্ছিলো সংসার। সুখের সংসারে সুখে থাকতে ভূতে কিলিয়েছে জেসমিনের। সে স্বামীর ঘরে থাকলেও মোবাইলফোনে প্রেমসম্পর্ক গড়ে তোলে তারই বোন ময়না খাতুনের দেবর বিদেশ প্রবাসী বাবুর সাথে। জেসমিন বলেছে, বোন ময়না ও বোনের স্বামী ঢাকার জোরাইনে থাকে। বাবুর বাড়িও সেখানে। দেশে ফিরে দেখা করার কথা বলে। স্বামী থাকতে দেখা করবো কীভাবে? এ প্রশ্ন তুললেই বাবু বলে তোমার স্বামীকে এ জগত থেকে বিদায় করা হবে। মোবাইলফোনে কথামতো শনিবার বাবু তার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে আসে আমাদের বাড়িতে। সন্ধ্যায় স্বামী রাজাকে হত্যা করা হয়।

রাজাকে হত্যার সময় ছেলেমেয়ে দুজন কোথায় ছিলো? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মেলেনি। ওদের দূরে সরিয়ে দিয়েই জেসমিন তার পরকীয়া প্রেমিক বাবু ও বাবুর বন্ধুকে সাথে নিয়ে স্বামী রাজাকে হত্যা করেছে। হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। গতকাল পত্রিকায় আত্মহত্যা বলে খবরও প্রকাশিত হয়। অপরদিকে নিকটজনেরা মৃতদেহে আঘাতের দাগ দেখে স্ত্রী জেসমিনকে সন্দেহ করতেই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ জেসমিন, জেসমিনের স্বামী পরিত্যক্তা বোন নাসরিন ও মা জবেদা খাতুনকে থানায় নিয়ে আটকে রাখে। রাজার বড় ভাই রাশেদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় জেসমিন ও বাবুর নাম উল্লেখ করে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে বলে সূত্র জানালেও পুলিশ বিস্তারিত জানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে, আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই সব স্বীকার করেছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।