একুশে মানে মাথানত না করা ॥ অধিকার আদায়ের সাহস

বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে ৬৫ বছর আগে যে আন্দোলনের সূচনা হয় এই জনপদে, তা সম্পূর্ণ সফল হয়েছে বললে কমই বলা হয়। বলার অবকাশ রাখে না যে, ভাষাসংগ্রামের পথ ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। যা ইতিহাসের অনন্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই আমাদের এনে দিয়াছে বিরল এক আন্তর্জাতিক সম্মান। আজ বিশ্ব জড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এর মূলেও ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাসসৃষ্টিকারী সেই আন্দোলন।
কোনো প্রকার ইতস্ত না করে অসঙ্কোচে যে কথাটি বলা যায়, তা হলো ইতিহাস সৃষ্টিকারী অমর একুশের প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরায়নি, ফুরাবারও নয়। যে একুশে আমাদের পথ দেখিয়েছে, যুগিয়েছে প্রতিবাদের সাহস, তার প্রয়োজনীয়তা কি কখনো ফোরায়? ফলে অশুভ শক্তি রুখতে এখনও প্রয়োজন আমাদের সেই একুশের চেতনা, অমর একুশের সাহস। ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত শহিদ মিনার গুঁিড়য়ে দেয়ার যখন ষড়যন্ত্র এখনও স্পষ্ট তখন সেই সাহস প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার তাগিদ পদে পদে উপলব্ধি হয়। যদিও একুশের চেতনাকে রুখার সাধ্য কারও নেই। কারণ আমাদের প্রাণের অনেক গভীরে প্রোথিত তার শিকড়।
অমর একুশের মহান দিনে আক্ষেপের কিছু কথা প্রাসঙ্গিক বটে। তা হলো, বাংলা ভাষার সমৃদ্ধতা ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতা। তাছাড়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪৫ বছর কেটে গেছে, অথচ এখনও অফিস-আদালত ও উচ্চশিক্ষাসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন শতভাগ পরিলক্ষিত হয় না। এমনকি অর্ধযুগ আগে আদালতের হস্তক্ষেপেও পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ, বাংলার বহু শব্দ জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছি আমরা। সর্বস্তরে বাংলা চালুর অর্থ অবশ্য ইংরেজি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ভাষাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা নয়। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে আমাদের অবশ্যই বিশ্ব নাগরিকের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এটা যুগের দাবি।
শিকড়কে অস্বীকার বা উপেক্ষা করা যায় না। উচিতও নয়। ফলে যে শিকড়ের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসাই হলো ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সর্বোত্তম পন্থা। অমর একুশে মানে মাথানত না করা, অধিকার আদায়ের সাহস। সেই সাহস তখনই শানিত হয় যখন মাতৃভাষার প্রতি, দেশের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসা জন্মায়। এই ভালোবাসায় শানিত সাহস দেশবাসীকে এক কাতারে নিয়ে নিশ্চয় রুখবে দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। অমর একুশে ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা সৈনিক সকলকে অভিবাদন।