আলমডাঙ্গার ওজোপাডিকোর সংযোগ পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে হস্তান্তরের নির্দেশের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে গ্রাহক সাধারণ : অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার ওজোপাডিকোর বিদ্যুত সংযোগ পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে গ্রাহক সাধারণ। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হলে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে বলে সচেতনমহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি (পবিস) তাদের ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে থাকা প্রায় ১৫ হাজার বিদ্যুত সংযোগ হস্তান্তর করতে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানিকে (ওজোপাডিকো) চিঠি দিয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম ওই  চিঠিটি দিয়েছেন ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সুবক্ত গীনকে। চিঠির সাথে সংযুক্ত করেছেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রটি।

এদিকে, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে আলমডাঙ্গা শহরবাসী। বর্তমানে আলমডাঙ্গা শহরে চায়ের আড্ডা কিংবা রাজনৈতিক আলাপচারিতায়ও এ প্রসঙ্গটি ঘুরে ঘুরে আলোচিত হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে অচিরেই আন্দোলন শুরুর পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।

আলমডাঙ্গা ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলি আবেদ আলী সংশ্লিষ্ট পরিপত্রের বিষয়ে অবগত আছেন জানিয়ে  বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন তারা। আর দশটা এলাকার মতো আলমডাঙ্গা মোটেও ছোট এলাকা না, ওজোপাডিকোর ১০ হাজার গ্রাহক রয়েছে এখানে। এ বিষয়ে আলমডাঙ্গাবাসির পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই আইনি লড়াই চালানো হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলমডাঙ্গা অঞ্চলের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষা করছেন তারাও।  আলমডাঙ্গা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ শামীম রেজা বলেন, ওজোপাডিকোর  বিদ্যুত সেবায় মানুষ সন্তুষ্ট। পক্ষান্তরে পল্লী বিদ্যুত সমিতির সেবা সর্বনিম্নতর পর্যায়ের। ভোগান্তির একশেষ। আলমডাঙ্গার পল্লিবাসী অতিষ্ঠ। কিন্তু পল্লী বিদ্যুত সমিতি এখন গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে কালথাবা বিস্তার করছে। তিনি বলেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়য়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আলমডাঙ্গা শহরবাসীকে সাথে নিয়ে শীঘ্রই লাগাতার কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান।

আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি আশরাফুল হক বলেন, পল্লী বিদ্যুত সমিতি তো দুর্নীতির দুর্ভেদ্য দুর্গতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামের প্রত্যেকটা গ্রাহকের নাভিশ্বাস অবস্থা করে রেখেছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি। এমন অবস্থায় আলমডাঙ্গা শহরের সংযোগ পল্লী বিদ্যুত সমিতির নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের পরও নির্বিকার বসে বসে মেনে নেয়া আর জেনে শুনে বিষ পান একই কথা। তিনি যেকোন মূল্যে এ জনবিরোধি সিদ্ধান্ত রুখে দেয়ার জন্য সম্মিলিতভাবে আলমডাঙ্গা শহরবাসিকে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেন।

আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম মন্টু বলেন, হঠাৎ করে পল্লী বিদ্যুত নতুন করে শহর এলাকায় আগ্রাসন শুরু করেছে। অথচ যে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দিতে পল্লী বিদ্যুত সমিতি গঠন করা হয়, তিন দশকেরও বেশি সময় পার হলেও তারা গ্রামাঞ্চলের অর্ধেক মানুষকে বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছে দিতে পারেনি। তাদের কাছে শহর এলাকায় বিদ্যুত বিতরণের দায়িত্ব হস্তান্তরে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান এম সবেদ আলী বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি দফতর ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আমাদের এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই পিডিবি বিদ্যুত সরবরাহ করছে। বড় শহরের মতই এখানে গ্রাহক সংখ্যা। আমরা কোনভাবেই পল্লী বিদ্যুতের আওতায় যেতে চাই না। জোর করে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় হস্তান্তরের অপচেষ্টা করা হলে আলমডাঙ্গায় অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই মিল-চাতাল মালিক সমিতি আইনী লড়াইয়ে  নেমেছে। বণিক সমিতির উচিত এ ব্যাপারে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি তাদের এলাকাভুক্ত মোট ১৪ হাজার ৮৬৭ গ্রাহকের হিসেব ওজোপাডিকোকে দিয়েছে, যার মধ্যে ১২ হাজার ২৫০ জনই চুয়াডাঙ্গার। চুয়াডাঙ্গা ওজোপাডিকোর কার্যালয় থেকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার পৌর এলাকাগুলোতে বিদ্যুত সেবা নিয়ন্ত্রণ ও মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ এলাকার বিদ্যুত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩ সালের রাষ্ট্রপতির এক আদেশবলে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকা ছাড়া সব এলাকার বিদ্যুত সরবরাহের দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুত সমিতি পায়। ওই আদেশের আগে গ্রামীণ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কার্যক্রম ছিলো। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুত বিভাগের (সমন্বয়-২ শাখা) উপসচিব মোহাম্মদ মফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি কার্যালয়ে আসে। এতে মন্ত্রণালয়ের গত ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী তুলে ধরা হয়।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, সব বিত্যুত বিতরণকারী সংস্থা ও কোম্পানির ভৌগোলিক সীমা নির্দিষ্ট করা আছে। বিদ্যুত বিতরণ পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিজস্ব সীমানার মধ্যে তাদের সীমাবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এক সংস্থার ভৌগোলিক এলাকায় অন্য সংস্থা বিদ্যুত সংযোগ দিতে পারবে না এবং বিদ্যমান সংযোগগুলো এক মাসের মধ্যে স্থানান্তর করতে হবে। ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক বিদ্যুত বিতরণকারী সংস্থা ও কোম্পানিকে যেসব এলাকায় তাদের বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে, তার একটা মানচিত্র তৈরি করে বিদ্যুত বিভাগে পাঠাতে হবে।