ঝিনাইদহে পাখি নিধনে কারেন্ট জাল

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: পাখির হাত থেকে ক্ষেতের বাউকুল ও বেগুন রাক্ষা করতে গিয়ে ঝিনাইদহে কারেন্ট জাল দিয়ে চলছে নির্বিচারে পাখি নিধন। প্রতিদিন জেলার ৬টি উপজেলায় ৫শ বাউকুল ও শ শ বেগুন ক্ষেতে কারেন্ট জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির শ শ পাখি। বিভিন্ন এলাকার বেগুন ক্ষেতেও কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে পাখি নিধনের ঘটনা ঘটছে। নির্বিচারে পাখি নিধনের ফলে জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ব্যাপকভাবে বাউকুলের চাষ হচ্ছে। কুল চাষের জন্য ৫শ বাগান গড়ে উঠেছে। লাভজনক হওয়ায় চাকরি না-পাওয়া শিক্ষিত বেকার যুবকরাও কুলচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এদিকে পাখির হাত থেকে ক্ষেতের কুল রক্ষায় চাষিরা অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে বাগান ঘিরে দিচ্ছেন। ৩০ ফুট উঁচু বাউকুলের বাগানে কারেন্ট জালের বেড়া দেয়ার ফলে খোলা আকাশে উড়ে বেড়ানো শ শ পাখি ওই জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে প্রতিদিন।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মনিরুজ্জামান জানান, এ বছর জেলায় বহু জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। আর কুল বাগান আছে ৫শ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ জমিতে কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতেছেন কৃষকরা। তিনি জানান, অনেক পাখিই আছে যে গুলোর বাউকুল বা বেগুন খাওয়ার অভ্যাস নেই। অথচ কারেন্ট জালের ফাঁদে পড়ে নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে পরিবেশবান্ধব দোয়েল, শালিক, বুলবুলি, পেঁচা, চড়ুই ও কবুতরসহ নানা প্রজাতির পাখি। শৈলকুপা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের বাউকুলের বাগান করা মালিকরা ক্ষেতের কুল রক্ষা করতে গিয়ে বাগানে কারেন্ট জাল পেতেছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী, নাটাবেড়ে, বেড়াদি, কাশিপুর, কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও কোটচাঁদপুরের সাফদারপুর এলাকায় শ শ বেগুন ক্ষেতের ওপরেও পেতে রাখা কারেন্ট জালে আটকে পাখি মারা হচ্ছে বলে এলকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির নেতা মাসুদ আহমেদ সঞ্জু বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তবে এক শ্রেণির বাগান মালিক কোনোভাবেই এ সবের তোয়াক্কা করছেন না। তিনি বলেন, পাখি নিধনে আইন আছে, কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান জানান, চাষিরা প্রাণিকূলের ক্ষতি করে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। বিষয়টি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি মনে করেন, কুল চাষিরা না বুঝে এ কাজ করছেন। কারেন্ট জাল পরিহার করে বিকল্প পদ্ধতিতে বাগানের পাখি তাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।