শিশু মুক্তাকে গলা টিপে হত্যা করেছে তার খেলার সাথী শাকিবের মা পপি ॥ লাশ উদ্ধার

দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুরে ৩ বছর বয়সী দুই শিশুর কলহের জের ধরে মানুষরূপী পাষাণী এক নারীর বর্বরতা ॥ গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি

 

দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুরে শিশুদের কলহের জের ধরে মর্মান্তিক শিশু হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। পাষাণী নারী পপি গলা টিপে হত্যা করেছে ৩ বছরের শিশু মুক্তাকে। রাতভর লাশ গুম করার অপচেষ্টায় হয়েছে ব্যর্থ। মুক্তা নিখোঁজের ১৫ ঘণ্টার মাথায় পরিত্যক্ত পায়খানার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয়েছে লাশ। পুলিশ গ্রেফতার করেছে হত্যাকারী পপিকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে অকপটে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। শিশু মুক্তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।darsana-pic-3

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গতপরশু বুধবার সকালের দিকে দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর মাঠপাড়ার ভ্যানচালক মিস্টারের ৩ বছর বয়সী কন্যাশিশু মুক্তার সাথে প্রতিবেশী ভ্যানচালক নাসির উদ্দিনের একই বয়সী ছেলে শাকিবের হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিকেল থেকে মুক্তাকে খুঁজে না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সন্ধ্যা থেকে গোটা দর্শনায় মাইকের মাধ্যমে মুক্তার নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হলেও মেলে না সন্ধান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পপির স্বামী নাসির প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পায়খানায় গেলে চোখ পড়ে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের দিকে। এগিয়ে গিয়ে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে চমকে ওঠেন তিনি। নাসিরের চিৎকারে ছুটে যান প্রতিবেশীরা। সেপটিক ট্যাংকের ভেতর শিশুর লাশ  দেখে খবর দেয়া হয় পুলিশে। দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শোনিত কুমার গায়েন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করেন লাশ। পরে প্রতিবেশীরা ওই লাশ শিশু মুক্তা’র বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তা’র বাবা মিস্টার, মা উজালা ও নাসিরকে থানা হেফাজতে নেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো তথ্য মেলে না। ফের বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। শুরু থেকেই পপির আচরণ ছিলো এলোমেলো। ফলে পুলিশ সন্দেহমূলকভাবে পপিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে গোটা মহল্লাবাসী ও পুলিশের সামনে অকপটে শিশু মুক্তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে পপি। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ভারপ্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন ও দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পপিকে গ্রেফতার করে নেয়া হয় থানা হেফাজতে। পুলিশের সামনে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে পপি বলেছে, গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে মুক্তা আবারও তার বাড়িতে গিয়ে শাকিবের সাথে দ্বন্দ্ব বাধায়। রাগের মাথায় পপি শিশু মুক্তাকে ঘরে আটকে চড়থাপ্পড় মারি। একপর্যায়ে মুক্তা’র চিৎকার চেঁচামেচির ভয়ে গলা টিপে ধরলে তার শ্বাসরোধ হয়ে সে মারা যায়। মুক্তা’র লাশ লুকোতে রাতভর চেষ্টা চালাই। প্রথমে চুলোর ছাইয়ের গাদায় পোঁতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে পায়খানার পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি। এ কথা স্বামীসহ পরিবারের সকলের ছিলো অজানা। এ ঘটনায় মুক্তা’র মা উজালা বাদী হয়ে গতকালই পপির বিরুদ্ধে দামুড়হুদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশসূত্র জানিয়েছে।darsana-pic-4

এদিকে মুক্তা’র লাশ গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নেয়া হয় ঈশ্বরচন্দ্রপুরে। এ সময় গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। সন্ধ্যায় বেদনাবিধূর পরিবেশে স্থানীয় গোরস্তানে মুক্তা’র লাশ দাফন করা হয়। শিশু মুক্তাকে হত্যাকারী পাষাণী পপির শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গোটা এলাকার মানুষ।