মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

 

দর্শনায় মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণ ও মতবিনিময়সভায় এমপি আলী আজগার টগর

 

দর্শনা অফিস: যেকোনো মূল্যে চুয়াডাঙ্গা জেলাকে মাদকমুক্ত করণের ভূমিকায় মাঠে নেমেছে পুলিশ। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে গণসচেনতা জেলা পুলিশের কার্যকরি ভূমিকায় সাড়া মিলেছে ব্যপক। মাদক কারবারিদের আতœসমর্পণ যেন সর্বকালের রেকর্ড ভাঙতে শুরু করেছে। জেলা, উপজেলা, পৌর শহরের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে মাদকবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। মাদক কারবারিদের সুধরে নেয়ার জন্য দেয়া হচ্ছে সুযোগ। জেলা বিভিন্ন এলাকায় মাদকমুক্ত করণে এ ধরনের সভা-সমাবেশ ও আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) বেলায়েত হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় দর্শনায় মাদকাসক্ত ও মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণ ও মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দর্শনা ও দামুড়হুদা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দর্শনা দর্শন সিনেমা হল চত্বরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। প্রধান অতিথি বলেন, মাদকদ্রব্য ধ্বংশ করে দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিকে। বৃদ্ধি পায় সামাজিক অবক্ষয় ও অপরাধমূলক কর্মকা-। ধ্বংশের পথে ধাবিত হয় যুবসমাজ। মাদকের কড়াল থাবা নিঃশেষ করে দেয় মন্যুস্বত্বকে। আমি মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। যারা মাদকের বিকিকিনি করে কলূষিত করছে দেশ, জাতি ও সমাজকে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা সকলের নাগরিক দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে মাদক চোরাকারাবারিরা দেশের চরম শত্রু। তাই এদের রুখতে প্রশাসনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। সেই সাথে মাদক রোধ ও সামাজিক নিরাপত্তা সাধনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে সকলকে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক লে. কর্নেল আমির মজিদ বলেন, মাদক চোরাচালান ও সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকা- রুখতে বিজিবি সবসময় সোচ্চার। চোরাচালানীরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন আপনাদের সহযোগিতা পেলে এদের দমন করা খুবই সহজ হবে। তাই আসুন সমাজ, জাতি তথা দেশের স্বার্থে এদের চিহ্নিত করে আইনের কাঠগড়াই দাঁড় করিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করি। আজ যারা ভুল বুঝতে পেরে জঘন্য এ কর্মকা- থেকে নিজেকে সুধরে নিচ্ছে অবশ্যয় তারা সমাজের মঙ্গল চায়।

চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জীবনকে বাজি রেখে মানুষ ও দেশের কল্যাণে কাজ করছে নিরন্তর। বর্তমান সরকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন তার রেহায় নেয়। অপরাধীরা যদি অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে ফিরে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়, তাদের অবশ্যই সুযোগ দেয়া হবে। যারা অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে আসতে চায়, তাদেরকে ঘৃণা নয় বরং বুকে টেনে নিতে হবে। আজ যারা মাদকের বিরুদ্ধে শপথ নিয়ে বাড়ি ফিরছে, আমি বিশ্বাস করি তারা এখান থেকেই সঠিক পথের পথিক হবে। স্ব-শরীরে নয় মনের আত্মসমর্পণ করেই তারা বাড়ি ফিরবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এখনো যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের আবারো আহ্বান করা হচ্ছে, দ্রুত আত্মসমর্পণ করার জন্য। অন্যথায় পুলিশ প্রশাসন কঠোর তম ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে নামবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, কলূষমুক্ত সমাজ ও আজকের মেধাবী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। মাদক একটি ভয়ঙ্কর মারণ ব্যাধির নাম। তাই এ মারণ ব্যাধি থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ তথা জাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার, আমার সকলের।

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, অ্যাড শহিদুল ইসলাম, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আজিজুর রহমান, দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, তুষার কান্তি ঘোষ, দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফ, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, জেলা পরিষদের সদস্য মুন্সি সিরাজুল ইসলাম, কবি ও সাহিত্যিক আবু সুফিয়ান, কুড়–লগাছি ইউপি চেয়ারম্যান শাহ এনামুল করিম ইনু ও দর্শনা বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার তোফাজ্জেল হোসেন। দামুড়হুদা উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্য সচিব, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলমের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, রুস্তম আলী, ফজলুল হক, আ. হান্নান, বিল্লাল হোসেন, আ.লীগ নেতা আতিয়ার রহমান হাবু, মোমিনুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, আজাদ, যুবলীগ নেতা আ. হান্নান ছোট, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভঅপতি ইকরামুল হক পিপুল, ছাত্রলীগে নেতা তোফাজ্জেল হোসেন তপু, কেরুজ শ্রমিক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। এ সভায় দর্শনা বিভিন্ন মহল্লা থেকে ৬৯ জন মাদক কারবারি মাদক কারবার না করার শপথ নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী গতকাল পর্যন্ত আত্মসমর্পণকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩০ জন। অনুষ্ঠানের সাবির্ক তত্বাবধানে ছিলেন, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান ও দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সúেক্টর শোনিত কুমার গায়েন।