আদীবাসি নারীসহ ৬ জনকে ধরলেও সন্দেহের ঘোরেই পুলিশ : মেলেনি বহু প্রশ্নের জবাব

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার আঁইলহাসের কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম অপরহরণ ও হত্যার আড়াই মাস পার

 

আলম আশরাফ: পুলিশ প্রথমে পরকীয়ার বলি বলে দাবি করলেও পরে কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের হত্যার নেপথ্য নিয়ে অন্যরকম প্রশ্ন ওঠে। এসব প্রশ্নের জবাব যেমন খুঁজে পায়নি এলাকাবাসী, তেমনই পুলিশও রয়েছে সন্দেহের ঘোরে। যদিও আদিবাসীপাড়ার আদিবাসী পরিবারের নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবুও স্থানীয়দের দাবি, পুলিশ এখনও প্রকৃত আসামিদের ধরতে পারেনি।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাসের কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম অপহরণ ও হত্যার আড়াই মাস পার। গত ১৩ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে যান। সেখান থেকে থেকে সরোজগঞ্জ হয়ে আলমসাধুযোগে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন। ৬ দিনের মাথায় আইলহাস-রায়লক্ষ্মীপুর মধ্যবর্তী কুড়ির মাঠের একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তেমন কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন আলমসাধু থেকে নেমে আমিনুল ইসলাম যে ভ্যানযোগে রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামে গিয়েছিলো সে ভ্যানচালক কে ছিলো? সে কোথায় নামিয়ে দিয়েছিলো? এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি। নিহতের পরিবারের সদস্যরা এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার পাশাপাশি অপহরণ ও হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমিনুল ইসলাম অপহরণ পরবর্তী হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার পুলিশ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনে ছেলে কাঠব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম গত বছর ১৩ ডিসেম্বর সকালে ব্যবসায়িক কাজে বাড়ি থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যায় তিনি সরোজগঞ্জ থেকে আলমসাধুযোগে ফেরেন বাড়ির  রায়লক্ষ্মীপুরে। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ১৮ ডিসেম্বর আমিনুল ইসলামের মেয়ে ফাতেমা খাতুন মিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় পারলক্ষ্মীপুর বাগানপাড়ার তহির আলীর ছেলে জহুরুল ইসলামকেই বেশি সন্দেহ করার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি আমিনুল ইসলামের নিকট কিছু টাকা পেতেন। সেই টাকা নিয়ে মতবিরোধ ছিলো। মামলা রুজুর পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জহরুলকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। অপরদিকে আমিনুল ইসলামের মোবাইলফোনটি ট্রাকিং করে পুলিশ জানতে পারে, নিখোঁজ হওয়ার দিন অর্থাৎ ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেষ কথা হয়েছে রায়লক্ষ্মীপুরের বাগদিপরিবারের নেঙটো সরকারের স্ত্রী শ্রীমতি আভারানী সাথে। এ সূত্র ধরেই তাকেও গ্রেফতার করে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ। তাছাড়া মোবাইলফোনটির অবস্থানও আভারানীর বাড়ির আশপাশে থাকার বিষয়টি ট্রাকিঙে জানার পর মামলার বাদীর লোকজন সম্মিলিতভাবে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। মোবাইলফোন খুঁজতে গিয়েই পাওয়া যায় অর্ধগলিত লাশ। এদিন আভারাণী দুই ছেলে সঞ্জয় ও সুজন এবং আভারানীর স্বামীর বোন তুলসী রানীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সপ্তাহ দু কয়েক আগে শ্রী বিপুল কুমার নামের আরও একজন গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এখন পর্যন্ত আমিনুল ইসলাম অপরহণ ও হত্যাকাণ্ডের তেমন কোনো রহস্য উম্মচন করতে পারেনি। গ্রেফতারকৃতরা জেল হাজতে রয়েছে।

আমিনুল ইসলামের ছেলে আশিকুর রহমান আলো জানান, ঘটনার আড়াই মাস পার হলেও এ হত্যার কোনো কুল কিনারা করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এখন এ ঘটনাটি তদন্তে কোনো অগ্রগতির খবর নেই। তিনি বলেন, শ্রী আসিদ কুমার ও আজিজুল ইসলামের ছেলে চতুর আলীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা উদঘটন সম্ভব হবে। তাছাড়া আটকৃতদের পুনরায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ হলে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। আলো আরও বলেন, ঘটনার দিন আমার বাবা আলমসাধু থেকে নেমে একটি ভ্যানযোগে রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঢুকেছিলো। রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের ত্রীমোহনীর দোকানদারও দেখেছে। পুলিশ ভালো করে তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উদঘটন করতে পারবে। তবে এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক জিয়া বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আশা করি খুব শিগগির এ অপহরণ ও হত্যার রহস্যের জট খুলবে। তিনি বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

উল্লেখ্য. আমিনুল ইসলামের লাশ উদ্ধার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো আদিবাসীপাড়ার আভারাণীর বাড়ির অদূরবর্তী স্থান থেকে লাশ উদ্ধার ও তার বাড়িতে লাশের গন্ধ পাওয়া যায়। ওই আভারাণীর বাড়িতে গিয়েই নৃশংসতার শিকার হন আমিনুল ইসলাম। স্থানীয়দের অনেকেই বলেছেন, আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অন্য কোথাও ঘটিয়ে আভারাণীর বাড়ি অদূরে রেখে তাদেরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। আভারাণীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও কেন তাকে হত্যা করবে?