সড়কের মৃত্যুফাঁদগুলো অপসারণে প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা 

চুয়াডাঙ্গার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বেড়েই চলেছে দুর্ঘটনা : উদ্বিগ্ন সচেতনমহল 

 

সাইদুর রহমান/কামরুজ্জামান বেল্টু: সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির বহুবিধ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ সড়কের দু ধারে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনাসহ সড়কের কোল ঘেঁষে রাখা স’ মিলের কাঠ, বিক্রির জন্য গড়ে তোলা বালুর স্তূপ ও ইটভাটার এঁটেল মাটি রাস্তার ওপার পড়লেও তা পরিষ্কার না করা। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এলাকার উদ্বিগ্ন সচেতন সমাজ এ প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

চুয়াডাঙ্গার প্রধান পাঁচটি সড়কের পাশেই রয়েছে বেশ ক’টা ইটভাটা। ইটপোড়ানোর মরসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই ইটভাটায় ইট প্রস্তুতের জন্য দূর থেকে এঁটেলমাটি কেটে ট্রাক্টর ট্রলি, শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযান লাটাহাম্বারযোগে নেয়া হয়। এ মাটি পিচঢালা রাজপথে পড়ে মৃত্যু ফাঁদে রূপান্তর হয়। চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা থেকে শুরু করে জয়রামপুর পর্যন্ত রয়েছে ৬টির অধিক ইটভাটা। এসব ইটভাটায় নেয়া মাটির কিছু অংশ রাস্তায় পড়ার কারণে ইতঃপূর্বে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বছর বড় ধরনের প্রাণহানির পর প্রশাসন কিছুটা নড়ে বসে। ইটভাটা মালিকদের রাস্তা থেকে মাটি অপসারণের নিদের্শ দেয়। তাতে কিছুটা কাজ হলেও এবার সেদিকে প্রশাসনের তেমন নজর নেই। অবশ্য এবার দামুড়হুদায় নয়, ইটভাটায় নেয়া মাটি রাস্তায় পড়ে সৃষ্ট মৃত্যুফাঁদের কারণে আলমডাঙ্গার এক কলেজছাত্রসহ নিহত হয়েছেন তিনজন। রাস্তায় মাটি স্যাঁতস্যাঁতে পিচ্ছিল হওয়ায় শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান আলমসাধু ব্রেক করার পর নিয়ন্ত্রণ হারায়। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের একটি বাস ধাক্কা দিলে নিহত আলমসাধু আরোহী কলেজছাত্র ও চালকসহ তিনজন নিহত হন। ঘটনাটি ঘটে গত ৫ মার্চ সকালে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের কয়েকটি বাজারে সড়কের দুধারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে প্রকাশ্যেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ভালাইপুর মোড়ে অবৈধ স্থাপনার অঘোষিত প্রতিযোগিতার বিষয়ে পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশের পরও প্রশাসনের তেমন নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়নি। ফলে ভালাইপুর মোড়ের সড়ক দিন দিন মৃত্যুপুরিতে রূপ নিচ্ছে। এ সড়কের দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজের অদূরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চিৎলা ইউপি সদস্য রুইথনপুরের অহিদুল নিহত হওয়ার পর ঘটনাস্থলের নিকটস্থ স’ মিলের কাঠ ফেলে রাখার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। অনেকেরই অভিযোগ. স’ মিলের কাঠের কারণে ইতঃপূর্বেও কয়েক দফা বড়ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি ফুটে ওঠে। অবশ্য গত ৪ মার্চ মেম্বার অহিদুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর স’ মিলের কাঠ রাস্তার পাশ থেকে কিছুটা সরিয়ে নেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের সরোজগঞ্জের বিশাল এলাকায় স’ মিলের কাঠ রাস্তার পাশে ফেলে রাখায় প্রতিদিনই পথচারীদের প্রাণ যানবহনের চাকায় পিষ্ট হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। স্থানীয় একটি ক্লাব সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়ে কিছু কাঠ সরালেও কাঠব্যবসায়ীদের কারণে সড়কটি ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে না। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই স্কুলছাত্রীদের যাওয়া-আসা করতে হয়, সেই সড়কের ধারে কাঠ ফেলে রাখার কারণে ঝুঁকি পদে পদে। এছাড়া সড়কের পাশে বালুর স্তূপ রাখার কারণে পথচারীদের দুর্ঘটনার ঝুঁকিই শুধু বাড়েনি, মাঝে মাঝেই বাতাসে বালু উড়ে চোখে পড়ে দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করতে সড়কের দুধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অবৈধভাবে কাঠ-বালি রাখা বন্ধে প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ইটভাটায় নেয়া মাটি রাস্তায় যাতে না পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। এলাকার সচেতনমহল এ বিষয়ে প্রশাসনের আশুদৃষ্টি কামনা করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদেরও দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।