গুজবে কান দেবেন না, দু টাকার নোট বা ৫ টাকার কয়েন অচল নয়

খুচরা টাকা  নিয়ে বিভ্রান্তি : সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপকের স্পষ্ট উক্তি

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: ‘গুজবে কান দেবেন না। দু টাকার নোট বা ৫ টাকার কয়েন অচল নয়। প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখাই একাউন্টধারীর এ টাকা নিতে বাধ্য। কোনো ব্যাংকের শাখা কোনো গ্রাহক বা অ্যাকাউন্টধারীর স্বাভাবিক জমাদানের ক্ষেত্রে দুই টাকা বা ৫ টাকার কয়েন নেয়নি এরকম সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবশ্যই দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই টাকার নোট ও পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে নানামুখি গুজব তৈরি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক মোহা. মাহববুর রহমান জোর দিয়ে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‌‘অবাক হলেও সত্য যে, আমরাও শুনছি নানা গুজবের কথা। অথচ এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের একজন অ্যাকাউন্টধারীও নির্দিষ্টভাবে ওই টাকা জমা না নেয়ার কোনো অভিযোগ করেননি। তাছাড়া সরকারিভাবেও নির্দেশনা রয়েছে, কোন ব্যাংকের কোনো শাখা যদি কোনো অ্যাকাউন্টধারীর খুচরা টাকা না নেয়, তা হলে সেই ব্যাংকের সেই শাখার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের নিকটও অভিযোগ করা যাবে। কেউ কি এমন অভিযোগ করেছেন? তা হলে গুজবে কান দিয়ে কোন কয়েন চুম্বকে ধরছে, আর কোনটি অচল তা নিয়ে সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন কেন?

চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহুদিন ধরেই খুচরা দু’ টাকার নোট ও পাঁচ টাকা মানের কয়েন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কেন? চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কয়েকটি ক্ষুদ্র দোকানির সাথে যোগযোগ করা হলে তারা অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, সিগারেট কোম্পানির লোকজন খুচরা টাকা একদমই নেন না। বলেন, ওই টাকা চলে না। এক দু’ বা পাঁচটাকার কয়েন দিলে পরবর্তীতে সিগারেট দেয়া হবে না। এ কারণে খুচরা টাকা সাধারণ ক্রেতাদের নিকট থেকে কোনো দোকানিই নিতে চাচ্ছেন না। কয়েকজন দোকানি অবশ্য বলেছেন, শুধু সিগারেট কোম্পানির লোকজন নয়, অন্যান্য কোম্পানির লোকজনও যেমন খুচরা টাকা নিচ্ছেন না, তেমনই পাইকারি দোকনিদের কাছে খুচরা নিয়ে গেলে মাল দিচ্ছে না। এ কারণে ক্ষুদ্র স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীদের ঘরে খুচরা টাকা ও কয়েন জমে পুঁজি হারানোর অবস্থা।

চুয়াডাঙ্গা পানহাটে গেলে বেশ ক’জন পানচাষি খুচরা টাকা নিতে বাধ্য হওয়ার কষ্টের বর্ণনা দিয়ে বলেন, পান বিক্রি করলে এক-দু বান্ডিল দু টাকার নোট নিতে হয়। না নিলে পানই নিতে চান না বেপারিরা। ওই টাকা নিয়ে চাল নুনের দোকানে গেলে দোকানিরা বলছে, খুচরা টাকা চলছে না। শুধু কি চাল নুনের দোকানিও? রাস্তায় অটোভাড়া দিতে গেলেও কয়েন নিচ্ছে না চালক।  আবার গ্রামের মুদি দোকানে কয়েন দিতে গেলে অনেক দোকানিই চুম্বক দিয়ে তা চেক করে দেখছে। চুম্বকে ধরলে সেই কয়েকন নাকি অচল। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক চুম্বকে ধরা না ধরা কয়েনের বিষয়ে বলেছেন, কাগজের টাকা জালটাল হতে পারে। কিন্তু কয়েন জালের সুযোগই নেই। তা ছাড়া কোনটি চুম্বকে ধরলো আর কোনটি ধরলো না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধাতব মুদ্রা চুম্বকে ধরতেও পারে, নাও ধরতে পারে, তা মোটেও অচল নয়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১৫টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার কোনোটি কি কোনোদিন কয়েন চুম্বক দিয়ে চেক করেছে? নিশ্চয় না। তাছাড়া কোনো গ্রাহক তথা একাউন্টধারী স্বাভাবিকহারে কয়েন বা খুচরা টাকা জমা দিতে গেলে নিশ্চয় তাকে ফেরত আসতে হয়নি। এমন হতে পারে, কোনো শাখায় কোনো গ্রাহক শুধুই খুচরা টাকা নিয়ে গেছেন। তখন অতো টাকা গোনার ক্ষেত্রে অনীহা বা অনাগ্রহের বিষয়টি ফুটে উঠতে পারে। কিন্তু খুচরো টাকা বা কয়েন নেবে না এটা কেউ বলতে পারবে না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নিদের্শনা রয়েছে। তাই বিধিমতে কোনো শাখা থেকেই কোনো টাকা বা কয়েন ফেরত দিতে পারবে না। ক্যাশ কাউন্টার থেকে ‘নেবো না’ এমনটি বললে ওই শাখার ব্যবস্থাপকের নিকট প্রথমে জানানো যেতে পারে। তিনি ব্যবস্থা না নিলে আমাদের নিকট বা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ পেশ করতে হবে। সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখায় কি দু টাকার নোট, পাঁচ টাকার কয়েন নেয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- অ্যাকাউন্ট নেই এমন কেউ ওই খুচরা টাকা জমা দিতে এলে কি নেয়া হবে? কোনো অ্যাকাউন্টধারী বলতে পারবেন না, আমরা ‘নেবো না’ বলে একটি টাকা বা কয়েন ফেরত দিয়েছি। তাছাড়া কোনো গ্রাহক যদি সবই খুচরা আনেন সেক্ষেত্রে তো আমাদের একটু বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। কেউ এক লাখ টাকা জমা দিচ্ছেন, তার মধ্যে দু-পাঁচ হাজার টাকা খুচরা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে ক্যাশ গ্রহণকারীর বিরক্ত হওয়ারও কারণ নেই। তবে ছেঁড়া বা ধোয়া টাকার ক্ষেত্রে আপত্তি উত্থাপন করা হয়। কারণ, ছেঁড়া টাকা নেয়ার কাউন্টার আমাদের এখানে লোকবলের কারণে খোলা নেই। তবে খুলনা শাখায় রয়েছে।

সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপকের সাথে খুচরা টাকা নিয়ে আলাপচারিতার ফাঁকে যুগ্ম জিম্মাদার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের শাখায় প্রচুর কয়েন রয়েছে। দু টাকার নোটও রয়েছে ’হিউজ। তার পরও আমরা বলতে পারি না, ওই টাকা নেবো না। আমাদের কাছে নতুন ৫ টাকার কয়েন গ্রাহকদের মাঝে দেয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করেছে। সেটা যেমন মজুদ রয়েছে তেমন গ্রাহকদের জমা দেয়া প্রচুর খুচরা টাকাসহ কয়েনও জমা রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি। অথচ সাধারণ মানুষ এসব খুচরা টাকা বিভ্রান্তর মধ্যে পড়ে হয়রানি হচ্ছেন। খুচরা নিয়ে গুজবে কান না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে লেনদেন করলে কোনো জটিরলতাই থাকে না। কেন না, খুচরা টাকা তো বাজারে ছাড়া হয় স্বাভাবিক লেনদেনকে সহজ করার জন্যই। তাই খুচরা টাকা বা কয়েন লেনদেনে কোনো সমস্যা নেই। কোনো কয়েন অচলও নয়।