ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে স্কুলছাত্র ও ট্রাকের ধাক্কায় হোটেল শ্রমিক নিহত

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পসডাঙ্গা ও জীবননগরের সন্তোষপুরে পৃথক দুর্ঘটনা

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় ইটবহন করা ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে দরিদ্র পরিবারের ছেলে স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একজন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের সন্তোষপুর মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় এক হোটেল কর্মচারী প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার পৃথক সময়ে পৃথক দুর্ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা-আরামডাঙ্গা সড়কের ভূমিহীনপাড়ার কাছে বেপরোয়া গতির ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক বাইসাইকেল আরোহী স্কুলছাত্র ইছানুল নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একজন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কার্পাসডাঙ্গা আরামডাঙ্গার মুচিপাড়ার মোড়ে (নেভি ভাটার অদূরে) এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইছানুল (১০) দামুড়হুদার কুড়–লগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারে ছেলে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির দেড় দু ঘণ্টার মাথায় বেলা ১২টার দিকে মারা যায় ইছানুল।
পুলিশসহ স্থানীয়রা বলেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালী গ্রামের জব্বারের ছেলে জুলহাক (৩৫) রেড বিল্ডের একটি অনিবন্ধিত ট্রাক্টর চালক। ইট নিয়ে ঠাকুরপুরের উদ্দেশে রওনা হয় জুলহাক। বিপরীত দিক থেকে ঠাকুরপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে পীরপুরকুল্লাহ নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইছানুল (১২) ও তার সঙ্গী একই গ্রামের নূরুলের ছেলে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফারুক (১৩) বাইসাইকেলে চেপে কার্পাসডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। ইটবহন করা ট্রাক্টরচালক বেপরোয়া গতিতে ছোটার কারণে স্কুলছাত্র দুজনকে ধাক্কা দেয়। ইছানুলের পেটের ওপর দিয়ে ট্রাক্টরের চাকা চলে যায়। ফারুক ছিটকে পড়ে আহত হয়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ইছানুলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আহত ছাত্র ফারুক স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরে। নিহত ইছানুলের লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে দাফনের প্রক্রিয়া করা হয়। ইছানুলের আত্মীয়স্বজনরা জানান, ইছানুল স্কুলে নিয়মিত ছিলো না। অভাবের কারণে নিজেদের একটা দোকানে বেচাকেনা করে যা রোজগার করতো তা দিয়ে তাদের সংসার চলতো। সে মারা যাওয়ায় তার পরিবারে অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।
দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চালক দামুড়হুদার নাপিতখালী গ্রামের জুব্বার আলীর ছেলে জুলহাক ট্রাক্টর ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ট্রাক্টরটি উদ্ধার করে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে রেখেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষ আপস মীমাংসার জন্য বসেছে। উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি কার্পাসডাঙ্গা-দামুড়হুদা সড়কে রেড ব্রিক ফিল্ডের এই ট্রাক্টর চালক জুলহাক মোবাইফোনে কথা বলতে বলতে একটি ইটের খোয়া ভাঙা গাড়ির সাথে বেপোয়া গতিতে ধাক্কা মারলে ওই সময় রিপন নামের এক শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় ইভাটা মালিক ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে মামলা থেকে রেহায় পান।
এলাকার ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, খবর পেয়ে দ্রুত কার্পাসডাঙ্গার পূলিশ ফাঁড়ির এসআই ও এএসআই সুব্রত বিশ্বাস ও মাসুদ রেজা ঘটনাস্থল থেকে ট্রাক্টর জব্দ করে কার্পাসডাঙ্গা পূলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী তার দুই বন্ধু ফারুক ও আজিজুল ও ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির মিনতি এবং স্থানীয় রাজ্জাক মেম্বার জানিয়েছেন, ইটভর্তি ট্রাক্টরটি যখন কার্পাসডাঙ্গার আরামডাঙ্গা মুচিপাড়ার নিকট পৌঁঁছায় তখন ইছানুল ও তার বন্ধুরা কার্পাসডাঙ্গা বাজারে চুল কাটার জন্য আসছিলো। ইটভর্তি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ইছানুল মারা যায় বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় জনগণ দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায় ইছানুল। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে চালক পালিয়ে যায়। নিহতের চার ভাই বোনের মধ্যে সে ছোট ছেলে। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮টার দিকে নিহতের লাশ নিজ বাড়িতে নেয়া হলে গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আকাশ। গতকালই রাত ১০টায় স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। এদিকে দামুড়হুদা উপজেলা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ মো. ফখরুল আলম খান জানান, দামুড়হুদা উপজেলা মডেল থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্য মামলা হয়েছে।
জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের সন্তোষপুর মোড়ে গতকাল শুক্রবার দ্রুতগামী একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে হোটেল কর্মচারী শাহিন (১৮) নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলচালক আন্দুলবাড়িয়া বাজারের নিউ শিমুল হোটেলের মালিক রেজাউল খান (৪৫)। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত শাহিন উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের শাহজাহান আলীর ছোলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে আন্দুলবাড়িয়া বাজারের নিউ শিমুল হোটেলের মালিক আন্দুলবাড়িয়া খাপাড়ার জব্বার খানের ছেলে রেজাউল খান তার হোটেলের কর্মচারী শাহিনকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে উথলীতে দই-মিষ্টি সরবরাহ করতে যাচ্ছিলেন। সন্তোষপুর মোড়ে পেঁৗঁছুলে দর্শনা থেকে জীবননগরগামী দ্রুতগতির একটি ট্রাক তাদেরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুজনই মারাত্মক আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহিনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে রেজাউলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। জীবননগর থানার ওসি এনামুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘাতক ট্রাকটি (চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৬৬০) দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে। ট্রাকটি আটক করা সম্ভব হয়নি।