আক্রান্ত হলে জবাব দেয়ার প্রস্তুতি থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে শক্তিশালী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ তার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নৌ জেটিতে দেশে প্রথমবারের মতো নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে দুটি ডুবোজাহাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং প্রদানকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে কখনো কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে, তাহলে আমরা তার সমুচিত জবাব দিতে পারি, সে প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যা যা করণীয়, তা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা চাই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যাতে জনগণের সার্বিক উন্নতি করতে পারি। তবে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যা যা প্রয়োজনীয়, তা আমরা সংগ্রহ করবো। কারণ, এগুলো হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডুবোজাহাজ দুটির কমান্ডিং অফিসারদের হাতে আনুষ্ঠানিক কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন এবং কমিশনিংয়ের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে চীন থেকে ক্রয় করা ডুবোজাহাজ দুটির নামফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দুটি সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার হওয়ার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সক্ষমতা অর্জন করলো। বিশ্বের মাত্র গুটিকতক দেশ সাবমেরিন পরিচালনা করে থাকে। সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পাবে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন কমিশনকৃত সাবমেরিন দুটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং কোনো সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে এ দুটি সাবমেরিন আত্মরক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে নৌবাহিনীতে সর্বোচ্চসংখ্যক জাহাজ সংযুক্তি বর্তমান সরকারের আমলে হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে পৌঁছুলে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌঘাঁটির কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আবু আশরাফ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে নৌবাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী পরে ত্রিমাত্রিক ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিএনএস বঙ্গবন্ধু এবং নৌ কমান্ডোদের মহড়াও প্রত্যক্ষ করেন। দুটি হেলিকপ্টার এবং দুটি এমপিএ বিমানও মহড়ায় অংশ নেয়।  প্রধানমন্ত্রী এ সময় সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সহায়তার জন্য স্থাপনার উদ্বোধন এবং বিএনএস শেখ হাসিনা নামের একটি পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সাবমেরিন দুটি ঘুরে দেখেন এবং সাবমেরিনের যাবতীয় সক্ষমতার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করা হয়। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র এবং দেশ ও জাতির শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন দুটি টর্পেডো মাইন সজ্জিত: চীনের বন্দর থেকে সাবমেরিন দুটি গত বছরের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশে হস্তান্তর হরা হয়। ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন দুটি ৭৬ মিটার লম্বা এবং ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রশস্ত এবং অত্যাধুনিক টর্পেডো ও মাইন সজ্জিত। সাবমেরিন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং এর ওজন ১ হাজার ৬০৯ টন। এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, সাবমেরিন দুটি পরিচালনার জন্য দুই দেশের নৌবাহিনীর সদস্যদের ট্রায়াল এবং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।