দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

 

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বা অবহেলা যেন এক ধরনের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌ গুরুত্ব প্রদান করেন কি-না সন্দেহ। গত সোমবার গভীর রাতে মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে একজন হতভাগ্য শ্রমিকের মৃত্যু ও অপর দুইজনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা এটি প্রমাণ করে যে, একশ্রেণির নির্মাতা মানুষের জীবনের থোড়াই পরোয়া করে। রাজধানীতে নির্মাণ কাজে অনুরূপ অবহেলার ঘটনা ইতঃপূর্বেও বেশ কয়েকবার ঘটেছে এবং তাতে নিরীহ ব্যক্তিদের প্রাণহানিও কম হয়নি। শুধু রাজধানীতে কেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও অনুরূপ এক দুর্ঘটনা বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। অবশ্য এই ধরনের বৃহৎ নির্মাণ কাজের সময় দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়; কিন্তু তথাপি দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা যে জরুরি, এ কথা নিশ্চয়ই কাউকে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বজ্ঞান ও সঠিক ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কংক্রিটের বিশাল বিশাল স্ল্যাব, পিলার গার্ডার ইত্যাদি ওপরে ওঠানো বা নিচে নামানো যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা যারা না বোঝে তাদের দ্বারা এই কাজ করানোই তো রীতিমতো অন্যায়! নির্মাণকাজে সার্বক্ষণিক সাবধানতা অবলম্বন না করায় নিরীহ শ্রমিক, পথচারী বা যাত্রীসাধারণের প্রাণপ্রদীপ নিভে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আর এই অবস্থা নিশ্চয়ই মেনে নেয়া যায় না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত, যে বা যারা এই জাতীয় অবহেলার জন্য দায়ী, সে বা তারা যেন প্রচলিত আইন মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করা।

ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলার সময় কিংবা শ্রমিকরা ওপর থেকে নিচে নির্মাণ সামগ্রী ফেলার সময় জননিরাপত্তার বিষয়টিকে অনেক সময় মাথায়ই রাখা হয় না। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভার নির্মাণকালে গার্ডার ভেঙে ১৫ ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলো আর সে স্মৃতি নিশ্চয়ই এখনও সকলকে তাড়া করে ফেরে। মাত্র কয়েকদিন পূর্বে মগবাজারের ফ্লাইওভারের ওপর থেকে লোহার রড পড়ে এক মোটরসাইকেল আরোহী মারা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ক্রেন দিয়ে গার্ডার তোলার সময় ক্রেনের চেনের সেই সক্ষমতা আছে কি-না, তা যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনও কেউ কেউ বোধ করে না। ফলে সমূহ বিপদ সবসময়ই শ্রমিক ও পথচারীদের মাথার ওপর ঘোরে। যা হোক, মালিবাগে ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটলো এবং যারা হতাহত হলো, সেই সকল ব্যক্তির পরিবারগুলোর জন্য কোনো সান্ত্বনা আছে কি? মোদ্দাকথা, সকল উন্নয়ন কাজে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।